পিরোজপুরের সোহাগদলে বঙ্গবন্ধুর ১৫ দিন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০১৮, ১৩:১৭

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার পাশ্ববর্তী পল্লী গ্রাম সোহাগদলে একটানা ১৫ দিন অবস্থান করেছিলেন।

১৯৫৬ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের সময় একটি উপ-নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এ অঞ্চলে টানা অবস্থান করেন। অবশেষে জাঁদরেল মুসলিম লীগ নেতা হাশেম আলী খানকে পরাজিত করে নিজ দলের প্রার্থী জয়নুল আবেদীন মোক্তারকে বিজয়ী করে নেন বঙ্গবন্ধু। সম্প্রতি এমন তথ্যে উচ্ছ্বসিত পিরোজপুর জেলার এ গ্রামের সাধারণ মানুষ। তারা এতদিন পর বঙ্গবন্ধুর অবস্থানকে নিয়ে গর্ব করছেন। জানার চেষ্টা করছেন, নতুন ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু যে ঘরটিতে থাকতেন সে খালি ভিটায় নতুন করে ঘর নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

স্বরূপকাঠি উপজেলার সোহাগদল গ্রামের প্রায় শতবর্ষী প্রবীণ ব্যক্তি আবদুর রহমান, যার ভাই ওই নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন তার স্মৃতিচারণ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, এর আগেও ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পিরোজপুরে পাঁচ বার সফর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তবে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর ১৫ দিন পিরোজপুরে অবস্থানের খবর এতদিন এ এলাকার তরুণ প্রজন্মের নিকট ছিল অজ্ঞাত।

১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সোহাগদলের আবদুর রব তালুকদারের এই ঘরটিসহ অন্য ঘরগুলো পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে। স্বাধীনতার পরে অন্য ঘরগুলো পুন:নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহাসিক এই ঘরের ভিটা শূন্য ছিল। সম্প্রতি এই অজানা তথ্য আবিষ্কার হলে প্রয়াত আবদুর রব তালুকদারের আমেরিকা প্রবাসী স্ত্রী ও পুত্ররা বঙ্গবন্ধুর অমর স্মৃতিধন্য এই শূন্য ভিটায় একটি দালান নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

আবদুর রহমান বলেন, ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক গভর্নর হলে তার আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে উপ-নির্বাচনে পিরোজপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তার ভাই জয়নুল আবেদীন মোক্তার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন। স্বরূপকাঠি-বানারীপাড়া-কাউখালী এই তিনটি থানা নিয়ে পিরোজপুর উত্তর প্রাদেশিক পরিষদের আসনটি ছিল।

এ আসনে জয়নাল আবেদীনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার সাবেক মন্ত্রী মুসলিম লীগ নেতা খান বাহাদুর হাশেম আলী খান। এই নির্বাচনী প্রচারণায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে একটি ছোট লঞ্চে করে স্বরূপকাঠিতে আসেন।

তিন বলেন, দুই-তিন দিন প্রচারণা চালিয়ে মওলানা ভাসানী ঢাকা ফিরে গেলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহাগদলের আবদুর রব তালুকদারের ঘরে একটানা ১৫ দিন থেকে স্বরূপকাঠি-বানারীপাড়া-কাউখালী থানার অসংখ্য জনসভা ও কর্মিসভায় ভাষণ দেন এবং জয়নুল আবেদীনকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহম্মেদ, বরিশালের মহিউদ্দিনসহ যুক্তফ্রন্টের শরিক দলের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন।

ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াও একদিন এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রচারণা চালান উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয়দের মধ্যে আবদুর রহমান, মোসলেম আলী হাওলাদার, জহুরুল হক লাল মিয়া, হাবিবুর রহমান তালুকদার এবং হাফিজুর রহমানসহ শতাধিক স্থানীয় নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকতেন। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এবং ব্যক্তিত্বের কারণেই হাশেম আলী খানের মতো নেতাকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল এবং সমগ্র পাকিস্তানে প্রমাণ করা সহজ হয়েছিল যে, যুক্তফ্রন্টের সপক্ষে জন সমর্থন অক্ষুন্ন রয়েছে।

এবিএন/সৈয়দ বশির আহম্মেদ/জসিম/নির্ঝর

এই বিভাগের আরো সংবাদ