আজকের শিরোনাম :

ফরিদপুরের ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবিতে রাজপথে ৩৪ সংগঠন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২১, ১৭:৪৮

দুইশ’ বছরের পুরোনো ফরিদপুরের সদরপুরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বাইশরশি জমিদার বাড়ী প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধিনে নিয়ে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং বড়িটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ফরিদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।

আজ মঙ্গলবার সদরপুর ও ফরিদপুরে এ দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়। ৩৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ‘বাইশরশি জমিদার বাড়ি রক্ষা ও সংরক্ষণ আন্দোলন’-এর অংশ হিসেবে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ‘ফরিদপুরের  সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যপ্রেমি সংগঠন’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

হাজারো কন্ঠে ‘বাইশ রশি জমিদার বাড়ি, সবাই মিলে রক্ষা করি’- শ্লোগানে মুখরিত পরিবেশে  প্রায় দিনব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করে ফরিদপুরের তরুণ সমাজ। সকাল ১০টার দিকে সদরপুরে পুখরিয়া-সদরপুর সড়কের বাইশরশিতে জমিদার বাড়ির সামনের সড়কে প্রথমে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

এরপর আন্দোলনকারীরা জমিদার বাড়ির চত্ত্বরে ঢুকে মানব বলয় রচনা করে দীপ্ত কণ্ঠে শপথ নেয়, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আন্দোলন যতদিন চলবে, ততদিন রাস্তায় থাকবো। আন্দোলনের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।’

বাইশরশি জমিদার বাড়ির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে এ আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাইশরশি জমিদার বাড়ী শুধু সদরপুরের নয় সারা দেশের একটি ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য রক্ষা করতে যা যা প্রয়োজন তা আমরা করব।

 তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এ এলাকার সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে অনুরোধ জানাই আমাদের প্রাণের দাবির প্রতিসম্মান দেখিয়ে এ জমিদার বাড়ী রক্ষা করাসহ এ এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাইশরশি জমিদার বাড়ি সংরক্ষণপূর্বক পর্যটর কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান আন্দোলনের মুখপত্র সেপটোস ফোর এর সভাপতি হাওলাদার শামীম আহমেদ। এই আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ভাঙ্গা কে এম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোশায়েদ হোসেন ঢালী, বাইশ রশি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এনামুল হক ফকির, কাশিয়ানীর ইয়ার আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, ভাঙ্গা সিপিবির সদস্য প্রভাষ মালো, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর সাবেক ব্যাক্তিগত সহকারি তৌহিদুর রহমান, কৃষক গোলাম হুসাইন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, এ ঐতিহ্য আজ একটি হিং¯্র থাবার মুখে পড়েছে। দুইশ বছরের পুরনো এই বাড়িটি রক্ষা না করে আজ বিক্রি করে দেওয়ার পায়তারা চলছে।

বাইশরশি জমিদার বাড়ির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে আন্দোলনকারীরা সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ইউএনও পূরবী গোলদারের হাতে দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেন। এরপর আন্দোলকারীরা দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে কিছু সময়ের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন।

যে ৩৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এ আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সেপটোস ফোর, ঘুরি-ফিরি ফরিদপুর, আমরা করবো জয়, উৎস ফরিদপুর, বাংলা থিযেটার, উৎসর্গ পরিবার, উই কেয়ার, মানব কল্যাণ সমিতি, ফরিদপুর সিটি পেজ, ফরিদপুর ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও সমকাল সুহৃদ সমাবেশ।

এদিকে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে  ট্রাভেলগ্রাম বাংলাদেশ, হিমাদ্রী ট্রাভেল, কানামাছি ভোঁ ভোঁ ও জাহাজী নামের চারটি ভ্রমণ ও পরিবেশবাদী সংগঠনের ১৬জন সদস্য বাইশরশি জমিদার বাড়িতে আসেন। তারা জমিদার বাড়ির বিভিন্ন ঘর পরিস্কার করেন এবং বাড়ির চত্ত্বরে মশাল প্রজ্জ্বলন করেন।

সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী গোলদার বলেন, ওই সম্পত্তি ‘ক’ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি। এটি এ অঞ্চলের জমিদারদের সর্বশেষ নিদর্শন। এটি বেহাত হয়ে গেলে এ এলাকায় বাইশরশি জমিদারদের কোন অস্তিত্ব থাকবে না।


এবিএন/কে এম রুবেল/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ