আজকের শিরোনাম :

সোনাগাজীর ইউএনও এবং ভুমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বালু মহাল ইজারাদারের মামলা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০১৮, ১৯:১৩

বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন নষ্ট করে দেয়ায় ফেনীর সোনাগাজীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল পারভেজ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরীন ফেরদৌসির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন মো. রুহুল আমিন নামে এক বালু মহাল ইজারাদার।  তিনি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

আজ বুধবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে (আমলী আদালত-৩) স্বশরীরে হাজীর হয়ে তিনি এ মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

বাদি মামলায় উল্লেখ করেন, তার মালিকীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুহুল আমিন এর নামে সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ বালু মহালটি থেকে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসক থেকে ইজারা নেন।  গত ২২ জুলাই জেলা প্রশাসনের সাথে ইজারাদার রুহুল আমিন ৩০০টাকা মূল্যের নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বালু উত্তোলনের চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। গত ২৬ জুলাই জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর বাংলা ১৪২৫ সালের ১বৈশাখ থেকে ১৪২৫ ৩০চৈত্র পর্যন্ত বালু উত্তোলনের জন্য তাকে কার্যাদেশ দেন।

ইজারাকৃত জায়গায় ইজারাদার রুহুল আমিন বালু উত্তোলনের জন্য একটি ড্রেজার মেশিন এনে রাখেন।  গত ২৭ আগস্ট সোমবার বিকালে ১নং আসামি সোহেল পারভেজ (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা), ২নং আসামি শাহরীন ফেরদৌসী (সহকারি কমিশনার ভূমি) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ড্রেজার মেশিনটির সংযোগ তার কেটে দেন এবং মেশিনটি অচল করে দেয়ার জন্য উপস্থিত শ্রমিকদের নির্দেশ দেন।  উপস্থিত লোকজন তাদেরকে বাদি বৈধভাবে বালু মহালটি ইজারা নিয়েছেন মর্মে অবহিত করলে তা কর্নপাত না করে আসামিরা উত্তেজিত হয়ে ড্রেজার মেশিনের ইঞ্জিনে ১কেজি লবণ ও ১কেজি চিনি ঢেলে দিয়ে ড্রেজার মেশিনটি অকেজো করে দেন। 

এছাড়া বাদিকে ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারেরও হুমকি দেন। এতে বাদি ও ইজারাদার রুহুল আমিনের আনুমানিক ২২লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা শাস্তি যোগ্য অপরাধ। ১৬৪/৪২৭/৫০৬।। ধারা মোতাবেক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন।

বাদি পক্ষে মামলা পরিচালানা করেন এ্যাডভোকেট জাহিদ হোসেন খসরু এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, ফজলুল হক ছোটন ও এ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন বাহারসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, গত কয়েক বছর যাবৎ সোনাগাজীর নির্মানাধীন সাহেবের ঘাট ব্রীজের ৩০০ গজের মধ্যে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমিন।তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামীলীগ নেতা।

মামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতার দাখিলকৃত কাগজ পত্রে দেখা যায়, ২৬ জুলাই বালু মহালের ইজারা পেয়েছেন।  জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ইজারায় শর্ত হিসেবে নির্মাণাধীন সাহেবের ঘাট ব্রীজ থেকে ১ কিলোমিটার উত্তরে বালু উত্তোলনের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে।  কিন্তু সরজমিনে দেখা যায়, ব্রীজ থেকে মাত্র কয়েকশ গজ নিকটে বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে।  অভিযোগে তিনি আরো উল্লেখ করেন, তিনি তার ড্রেজার মেশিন দিয়ে কোন বালু উত্তোলন করেনি কিন্ত সরজমিনে দেখা গেছে, সাহেবের ঘাট ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে বিশাল বালুর স্তুপ।  শ্রমিকরা বিক্রির জন্য এসকেভেটর মেশিন দিয়ে বালু ট্রাকে তুলছে।জিজ্ঞাসাবাদে শ্রমিকরা রুহুল আমিনের বালু বিক্রি করছে বলে জানায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোনাগাজী নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সোহেল পারভেজ, ভূমি কর্মকর্তা শাহরিন ফেরদৌসির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।  এর পূর্বে সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউপির ছোট ফেনী নদীতে নির্মাণাধীন সাহেবের ঘাট ব্রীজ এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে অবৈধ বালু উত্তোলন কারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট মুহাম্মদ সোহেল পারভেজ জানিয়েছে, অভিযানের সময় ঘটনাস্থলে বালু উত্তোলনকারী কাউকে পাওয়া যায়নি।  বালু উত্তোলনের মেশিনটি সরানোর ব্যাবস্থা চলছে।  তিনি আরো জানিয়েছে, বালু উত্তোলনের কারনে নির্মাণাধীন ব্রীজ ধ্বসে যাবে এমন আশংকা প্রকাশ করে নোয়াখালীর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল ফেনী জেলা প্রশাসক বরাবর অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে লিখিত আবেদন করে।

অভিযানের সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) শাহরিন ফেরদৌসি উপস্থিত ছিলেন।  অভিযানের টের পেয়ে বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি।  তবে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু জব্দ না করায় অভিযানের মুল উদ্দেশ্য নিয়ে জনসাধারনের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে সরকার দলের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র গত এক বছর যাবৎ সাহেবের ঘাট ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বালু উত্তোলন করেছে যার কারনে নির্মাণাধীন ব্রীজের এপ্রোচ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  ইতিমধ্যে ব্রীজের পশ্চিম দিকের প্রথম স্প্যামটির পাশের মাটি সরে গিয়ে ঝুকিপুর্ন অবস্থায় রয়েছে ও পূর্ব পাশের সিসি ব্লকের অনেকাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।  তারা আরো জানিয়েছে,উ ভয় পাশে অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে প্রভাবশালী মহলের সাথে ব্রীজ নির্মানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে।  তারা গত এক বছরে অন্তত কয়েক কোটি টাকার বালু উত্তোলন করেছে।

এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ