আজকের শিরোনাম :

বগুড়ায় মেয়রপ্রার্থী মান্নানকে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তারের নির্দেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:৫২

বহিস্কৃত আওয়ামীলীগ নেতা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী আব্দুলমান্নানআকন্দকে একটি দুর্নীতিরমামলায় গ্রেপ্তারেরনির্দেশ দিয়েছেনআদালত। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দুর্নীতি দমনকমিশনের (দুদক) করামামলায় এই নির্দেশ দেন বগুড়া স্পেশাল জজ আদালতেরবিচারকএমরান হোসেন চৌধুরী। গ্রেপ্তারিপরোয়নারবিষয়টিনিশ্চিতকরেছেনবগুড়া দুদকেরআইনজীবীআবুলকালামআজাদ।

আব্দুল মান্নান আকন্দ বগুড়া পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। মান্নান বগুড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য ছিলেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল একই মামলায় বগুড়ার শুকরা এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল মান্নান আদালতে আত্মসমার্পণ করতে গেলে তাকে জেল হাজতে পাঠান আদালত। মান্নান বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও বগুড়া পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান।
আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জানান, এস আই বি এলের ৩১ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার চার্জ গঠনের দিন ধার্য ছিল। এ দিন আব্দুল মান্নান আকন্দ অনুপস্থিত থাকার জন্য সময়ের প্রার্থনা করে ছিলেন। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে ওয়ারেন্ট জারি করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
দুদকের করা ৩১ কোটি দুর্নীতির এই মামলায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে ২৬ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিরা হলেন ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা রফিকুল, আতিকুল কবির, মাহবুর রহমান, জালিয়াত চক্রের সদস্য মো. আকতার হোসেন, মো. জহুরুল হক, মো. এনামুল হক, মাকসুদুল হক, ফেরদৌস আলম। বৃহস্পতিবার আদালতে আব্দুল মান্নান বাদে সবাই উপস্থিত ছিলেন।
৪০ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বগুড়া সদর থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা করেন। পরে মামলার অভিযোগ পত্রে নয়জনকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত করে দুদক।
মামলার এ জাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত ও অপরাধী চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে ব্যাংকের বগুড়া শাখার এক্সিকিউ টিভভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক (সাময়িকবরখাস্ত) রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ শাখার ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (সাময়িকবরখাস্ত) মো. আতিকুল কবির, বগুড়া শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (সাময়িকবরখাস্ত) মো. মাহবুবুর রহমানের যোগসাজশে ব্যাংকের গ্রাহকদের হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ব্যাংকের একটি তদন্ত দল ওই সময়ের হিসাবপত্র খতিয়ে দেখে, অর্থ আত্মসাৎকারীরা এই শাখার বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ কারী গ্রাহক মেসার্স আবুবকর সিদ্দিক ও মেসার্স আবদুল কুদ্দুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে বিনিয়োগ সুবিধার সৃষ্টি করে যোগ সাজশ কারীদের ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা স্থানান্তর করেন। ওই টাকা তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ জালিয়াত চক্র আত্মসাৎ করে। ব্যাংকের অনুসন্ধানে ১৯টি ভুয়া হিসাবের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলো হলো মেসার্স এমএম ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আকতার হোসেন ১০ কোটি ১০ লাখ, মেসার্স রিমাফ্লাওয়ার মিলসের মো. জহুরুল হক ১০ কোটি ১৮ লাখ, মেসার্স নিলয় এন্টার প্রাইজের মো. এনামুল হক প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ, মেসার্স রুমা ট্রেডার্সের আইরিন হোসাইন ১৫ লাখ, মেসার্স মাসফা এন্টারপ্রাইজের মাকছুদুল আলম প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ, মেসার্স ফিরোজ কনস্ট্রাকশনের ফিরোজ আহম্মেদের ৩ কোটি ৪২ লাখ, মেসার্স অতিথি ফিলিং স্টেশনের জাহাঙ্গীর আলম ৫ লাখ, মেসার্স হাসান কনস্ট্রাকশনের মো. ইমরুল ২৩ লাখএবং মেসার্স জাহিদ কনস্ট্রাকশনের মো. জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

এ ছাড়া মেসার্স হীরা মোটরসের নিখিল রঞ্জন কর্মকার ৬০ লাখ, মেসার্স আবদুল মতিন ট্রেডার্সের আবদুল মতিন ২০ লাখ, মো. আখতার হোসেন ১৪ লাখ, মেসার্স আররহমান এন্টারপ্রাইজের সোহেল রানা ১৪ লাখ, মেসার্স সুমন এন্টার প্রাইজের মো. মাহবুবুর রহমান ১৩ লাখ, মো. রফিকুল ইসলাম ৩ লাখ, মো. ফেরদৌস আলম ২০ লাখ, আরিফুল কবির ৩২ লাখ এবং মাসুদ আহমেদের বিরুদ্ধে ১০ লাখ সহ আরও একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়ে ছিল।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই মামলা তদন্তেরজন্য দুদকেরপ্রধানকার্যালয়েপাঠানো হয়। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতদন্তশুরুকরেনপ্রধানকার্যালয়েরউপপরিচালকআখতারহামিদ ভূঞা। পরে এ মামলারতদন্তকরেনউপপরিচালক সৈয়দ তাহসিনুলহক। ২০১৪ সালের ৪ জুনতিনিআসামিদেরমামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ারআবেদনজানিয়েআদালতেচূড়ান্তপ্রতিবেদন দাখিলকরেন।

আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সব আসামিকে অব্যাহতি দেন। এরপর হাইকোর্টে নারাজি আবেদন দাখিল করে ব্যাংক। নারাজি আমলে নিয়ে বিষয়টি আবারও তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। পরে দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ের (বগুড়া) তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত) মো. আনোয়ারুল হককে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আনোয়ারুল এ ঘটনা তদন্ত করে নয় জনের নামে অভিযোগ পত্রজমা দেন ২০১৭ সালের আগস্টে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তার ফিকুল ইসলাম, আতিকুল কবির, মাহবুবুর রহমান, জালিয়াত চক্রের সদস্য মো. আকতার হোসেন, মো. জহুরুল হক, মো. এনামুল হক, মাকছুদুল আলম, ফেরদৌস আলম ও শুকরা এন্টার প্রাইজের মালিক মো. আবদুল মান্নান। তবে এজাহারে থাকা অন্য আসামিদের টাকা পরিশোধ এবং ব্যাংকের পাওনা দাবিনা থাকায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এবিএন/শহিদুল ইসলাম শাওন/জসিম/জুয়েল

এই বিভাগের আরো সংবাদ