আজকের শিরোনাম :

নওগাঁর সড়কে এখনও চলে ফিটনেসবিহীন বাস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০১৮, ১১:০৪

জেলা শহর নওগাঁ থেকে উপজেলা সদর পোরশায় যোগাযোগর একমাত্র মাধ্যম লক্কর ঝক্কর মার্কা ফিটনেসবিহীন বাস। বাসগুলি যে কোন রাস্তায় চলাচলে একেবারেই অযোগ্য। অনেকে এসব বাসগুলোর নাম দিয়েছেন মুড়ির টিন। 

উপজেলা সদর পোরশা থেকে জেলা শহর নওগাঁ প্রায় ৭০কি: মি: রাস্তায় বাসে যেতে সময় লেগে যায় প্রায় তিন ঘন্টা। ফিটনেসবিহীন লক্কর ঝক্কর বাসে যাতায়াত করতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। এ অবস্থা যেন রাস্তাটির জন্মলগ্ন থেকেই। যদিও পূর্বে পোরশা-নওগাঁ সড়কের অবস্থা বেহাল ছিল। বিশেষ করে পোরশা-মহাদেবপুর সড়কের মাঝে মধ্যেই বড় বড় গর্ত ছিল। রাস্তার প্রায় স্থানের কার্পেটিং উঠে গিয়ে যেন কাদার রাস্তায় পরিণত হয়েছিল। সে সময়ে পোরশা থেকে জেলা শহর নওগাঁ যেতে সময় লাগতো প্রায় সাড়ে ৩ঘন্টারও অধিক। তখনও চলেছে এসব ফিটনেসবিহীন লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস।

কিন্তু প্রায় দু’বছর পূর্বে পোরশা-নওগাঁ সড়কটির পোরশা থেকে মহাদেবপুর পর্যন্ত নতুন করে রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এখন সড়কে নেই কোন ভাঙ্গা চুরা। নেই কোন খানা খন্দ। তবুও যেন ভাগ্য বদল হয়নি এ এলাকার বাস যাত্রীদের। তাইতো ভাল রাস্তায় এখনও চলছে লক্কর ঝক্কর মার্কা ফিটনেসবিহীন অত্যন্ত নি¤œমানের বাসগুলো।  

সড়কটি স্থাপনের পর থেকে এখন পর্যন্ত যাত্রীদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস দিয়েই অসহায়ের মত দীর্ঘপথ যাতায়াত করতে হয়। ফলে প্রতিনিয়ত সাধারন যাত্রীরা নানান দুর্ভোগসহ সড়ক দুর্ঘটনার আশংস্কা নিয়েই যাতায়াত করে থাকেন।
উন্নতমানের বাস সার্ভিস জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি হলেও তা আজো বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ এই অঞ্চলের হাজারো যাত্রী সাধারনের।
একই অবস্থা পোরশা-রহনপুর ও পোরশা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কেও। এ দুই সড়কে ভালো কোন বাস সার্ভিস নেই। সড়ক দুটি বেশ ভাল মানের হলেও নেই ভাল বাস সার্ভিস।

সরেজমিনে দেখা যায়, পোরশা উপজেলার নিতপুর বাসষ্টান্ড থেকে সারাইগাছী মোড় ও শিশা এবং মহাদেবপুর হয়ে নওগাঁয় চলাচলকারী বাসগুলো একেবারেই চলাচলের অযোগ্য। বাসগুলো দীর্ঘ দিনের পুরাতন ও লক্কর ঝক্কর এবং ফিটনেসবিহীন। বাসে বসার সিটগুলো অনেক ছোট ছোট হওয়ায় যাত্রীরা ভালভাবে বসতেও পারেন না। বসতে গেলে যেন হাঁটু আটকিয়ে যায় সামনের সিটে। ফলে বসতে অনেক কষ্ট হয় বাস যাত্রীদের। বাসগুলো এতই ছোট ছোট যে বাসের ভিতরে দাড়ানো যায় না। দাড়াতে গেলে মাথা আগেই বাসের ছাদে আটকিয়ে যায়। যে কারনে অনেকে এ বাসগুলোর নাম দিয়েছেন মুড়ির টিন।

ছোট বাসে ছিটের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় অধিকাংশ যাত্রীরা দাড়িয়েই থাকেন। সিট না পাওয়ায় অনেক যাত্রীকে বিশেষ কাজে দাড়িয়েই ৭০কি: মি: পথ নওগাঁ পর্যন্ত যেতে হয়। আকাশের বৃষ্টি হলে বাসের ছাঁদ চুঁয়ে পানি পড়ে যাত্রীদের শরীর ভিজে যায়। অনেক সময় বাসের ভিতরে জায়গা না পেয়ে জরুরী কাজে যেতে হবেই ভেবে অসহায়ের মত যাত্রীদের  বাসের ছাদের উপরেও উঠতে হয়। এতে ভোগান্তি যেন চরম থেকে চরমে উঠে যাত্রীদের। বিশেষ করে বৃদ্ধ, রোগী আর মহিলাদের কষ্ট আর ভোগান্তির যেন শেষ থাকে না। আর এ নিয়ে প্রায়ই বাসের চালক সুপারভাইজারদের সাথে বাক বিতন্ডা হয়ে থাকে যাত্রীদের। যেখানে আধুনিক যুকে নতুন নতুন যোগাযোগের মাধ্যম বাস তৈরি হচ্ছে, সেখানে পুরাতন অচল বাসগুলো যেন সড়কে থেকেই গেছে।

এদিকে পোরশা উপজেলা নওগাঁ জেলার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ন উপজেলা হলেও জেলা শহর নওগাঁ যাওয়া আশার জন্য সরাসরি কোন বিআরটিসি বাস দেওয়া হয়নি। জেলা শহর নওগাঁ যাওয়ার মাত্র দুটি মেইল সার্ভিস চালু রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নেই বললেই চলে। তাও আবার দুটি মেইলই সকালে পোরশা থেকে নওগাঁ যায়, আর বিকালে ফেরত আসে। একটি সকাল ৭টায়, অপরটি সকাল ৯টায়। বিকাল বেলায় কোন মেইল সার্ভিস নেই পোরশা থেকে জেলা শহর নওগাঁ যাবার। এতে অনেক যাত্রীকে বিকাল বেলায় বিশেষ কাজে নওগাঁ যেতে হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এদিকে সকাল বেলায় নওগাঁ থেকে পোরশা আসার কোন মেইল সার্ভিস নেই। এতে নওগাঁ থেকে পোরশা সকাল বেলায় আসতেও অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এ রুটে রাস্তার দুরত্ব অনেক হওয়ায় এবং জেলা শহর নওগাঁ হওযায় মেইল সার্ভিসের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিদিন কম পক্ষে ১০টি করে মেইল সার্ভিস দিলে মানুষের চাহিদা মিটবে। যা পোরশা থেকে সকালে নওগাঁর উদেশ্যে ৫টি মেইল সার্ভিস যাবে। বিকালে সেগুলো ফেরত আসবে। আবার বিকালে ৫টি মেইল বাস নওগাঁর উদেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং পরদিন সকালে ফেরত আসবে। এমনটাই দাবি পোরশাবাসীর। অপরদিকে, নওগাঁ-পোরশা চলাচলে বিআরটিসিরও দাবি রয়েছে পোরশাবাসীর। পাশাপাশি ভাল মানের বাসগুলো লোকাল হিসাবে পূর্বের নিয়মমতই চলাচল করবে। এতে মানুষের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি বাসের চাহিদাও মিটবে বলে মনে করেন এলাকার সচেতনমহল। 

এবিএন/ডিএম রাশেদ/জসিম/নির্ঝর

এই বিভাগের আরো সংবাদ