আজকের শিরোনাম :

টিনের ঝুঁপড়ি ঘরে মা ও শিশুসেবা!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০১৮, ২০:৩৭

টিনের চালার একটি ঝুঁপড়ি ঘরে চলছে ধাত্রী ফিরোজা বেগমের মা ও শিশু সেবা কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রে নিয়মিত সন্তান প্রসব করান ফিরোজা বেগম। তার ভুল চিকিৎসায় কারণে এক নব-জাতকের মৃত্যুর ঘটনায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

ফলে ওই মা ও শিশু সেবা কেন্দ্রটি বন্ধের দাবিতে লালমনিরহাট সিভিল সার্জনের নিকট আবেদন করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ একটি পরিবার। ফিরোজা বেগম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা রেলওয়ে কলোনীর ফজুল হকের স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়ে।

অভিযোগ উঠেছে, ধাত্রী ফিরোজা বেগম ক্ষমতাধর হওয়ায় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ঝুঁপড়ি ঘরে মা ও শিশু সেবা কেন্দ্র দেখেও না দেখার ভান করে চলছে।

স্থানীয়রা জানান, ফিরোজা বেগম ইএসডিও নামে একটি এনজিও ধাত্রী হিসেবে কিছু দিন চাকুরী করেন। পরে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বড়খাতা রেলওয়ে কলোনীর তিনি বাড়িতে টিনের চালার একটি ঝুঁপড়ি ঘরে মা ও শিশু সেবা কেন্দ্র নামে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তুলেন। ভিজিটও নেন রোগীর অবস্থা বুঝে।

এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা করে আগত রোগীদের ধাত্রী সেবার পাশাপাশি তিনি রোগীদের চিকিৎসাপত্র (প্রেসক্রিপশন) দিচ্ছেন। এ সেবা কেন্দ্রে পাশেই গরু ছাগলের থাকার জায়গা ও মলমূত্রের দুর্গন্ধ। এছাড়া নলকূপের নালার দুর্গন্ধযুক্ত পানি। সবমিলে থাকার অনুপযোগী এমন স্থানেই হয় নবজাতকের আঁতুর ঘর। তার ভুল চিকিৎসার কারণে বিভিন্ন সময় অনেক নব-জাতকের মৃত্যু হলেও ধাত্রী ফিরোজা বেগম ক্ষমতাধর হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।

এমনকি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে ফিরোজা বেগমের সখ্যতা থাকায় তারা অনুমোদনহীন ওই মা ও শিশু সেবা কেন্দ্র দেখেও না দেখার ভান করে চলছে।

জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট হাতীবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া এলাকার নুরে এলাহীর স্ত্রী জেমি বেগমের প্রসব ব্যাথা উঠলে তারা ফিরোজা বেগমের মা ও শিশু সেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। পরদিন একটি ছেলে বাচ্চা প্রসব করেন জেমি বেগম। বাচ্চা প্রসবের সময় আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে জেমির সদস্য ভুমিষ্ট সন্তান। তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নিতে চাইলে ধাত্রী ফিরোজা বেগম প্রথম দিকে রেফার করতে রাজি হননি।

নবজাতকের অবস্থার অবনতি হলে নুরে এলাহী জোরপূর্বক রেফার করে মা ও নবজাতককে প্রথমে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল পরে রংপুর মা ও শিশু হাসাপাতলে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৯ আগস্ট ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নুর এলাহী গত ১৫ আগস্ট হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

নুরে এলাহী অভিযোগ করে বলেন, ধাত্রী ফিরোজা বেগমের ভুল চিকিৎসার কারণেই তার বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি বিচার চেয়ে হাতীবান্ধা থানায় একটি অভিযোগও করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। ধাত্রী ফিরোজা বিভিন্ন কৌশলে সর্বমহলকে ম্যানেজ করে দম্ভ করে বেড়াচ্ছেন। ফলে গত ১৮ আগস্ট ওই মা ও শিশু সেবা কেন্দ্রটি বন্ধের দাবিতে লালমনিরহাট সিভিল সার্জনের নিকট আবেদন করেছি।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতিপত্র নেই স্বীকার করে ধাত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, বিভিন্ন এনজিওতে মা ও শিশু সেবা নিয়ে চাকরি করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বাড়িতে সন্তান প্রসব করে থাকি। তবে ভুল চিকিৎসায় নয় এবং ওই নবজাতক রংপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। অবৈধ গর্ভপাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. রমজান আলী জানান, বিষয়টি অবগত হয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফিরোজা বেগমের মা ও শিশু সেবা কেন্দ্র নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নেই।

হাতীবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া শুনেছি উভয় পক্ষ স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি মিমাংশা করতে চেষ্টাও করছেন।

এবিএন/আসাদুজ্জামান সাজু/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ