আজকের শিরোনাম :

চিরিরবন্দরে চিকিৎসক সংকটে বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৩২ | আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৮

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর), ২৬ আগস্ট, এবিনিউজ : একজন দক্ষ কর্মকর্তা কিভাবে একটি উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করতে পারেন তার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আজমল হক।

তাঁর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মর্তুজা-আল-মামুন, সার্জারী কনসালটেন্ট ডা. সন্দীপন চক্রবর্তী ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসার একটি আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে। এ হাসপাতালে ডাক্তারের চরম সংকট থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ঢুকলেই চোখে পড়বে চমৎকার ফুলের বাগান, সবজি বাগান।

হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় রংপুর বিভাগের অনেক হাসপাতালকে পেছনে ফেলে সাড়া জাগিয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে প্রতিটি বিভাগে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত এক বছর ধরে এখানে নরমাল ডেলিভারী করা হচ্ছে এবং করা হচ্ছে নরমাল ডেলিভারীর জন্য মানুষকে উৎসাহিত।

উপজেলা সমাজসেবা বিভাগের উদোগে নরমাল ডেলিভারীকৃত সদ্য ভূমিষ্ট নবজাতকের জন্য শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হচ্ছে। গত ১১ আগষ্ঠ শনিবার বিকেলে হাসপাতালের মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মাঝে যারা সবচেয়ে বেশি এই উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে তাদের পুরস্কৃত করা হয়। 

অপরদিকে, উন্নতমানের ৪-তলা ভবন চকচক করলেও চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় উপকরণের তীব্র সংকট আর ষ্টোরকিপারের চরম অবহেলা ও ঔষধ চুরির কারণে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের ১২টি পদের মধ্যে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আজমল হকসহ ডা. মর্তুজা আল মামুন ও ডা. সন্দীপন চক্রবর্তি কর্মরত রয়েছেন। অবশিষ্ট ৯টিই পদই এখনও শুন্য রয়েছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে ওই ৩ চিকিৎসক দিনে একেকজন দেড় শতাধিক করে রোগী দেখে থাকেন।

বৃহস্পতিবার ও শনিবার এ সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে যায়। তবে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কয়েকজন চিকিৎসক মাঝে মধ্যে এখানে রোগী দেখে থাকেন। কখনো কখনো চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে ওয়ার্ডবয় দিয়ে জরুরী বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে। নামমাত্র প্যাথলোজিক্যাল উপকরণ থাকলেও  একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অযতœ-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অনুমান করে চিকিৎসাসেবা কল্পনার বাইরে।

তারপরও এভাবেই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। লোডশেডিং চলাকালীণ নেই কোন বিকল্প ব্যবস্থা। জেনারেটর থাকলেও পেট্রোল অভাবে সেটিও মাঝে মধ্যে অচল থাকে। চিকিৎসক সংকট আর  নামমাত্র উপকরণ  দিয়েই  খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চিকিৎসাসেবা  চলছে উপজেলার সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষের। কর্তৃপক্ষের দিক থেকে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে  ঔষধ  না থাকার অজুহাত দেখানোর বিষয়টি যেন রোগীদের  বাড়তি পাওনা। অনেক রোগী সেবা না পেয়ে  বাধ্য হয়ে ফিরে যাওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে। 

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্স কর্মকর্তা ডা. মো. আজমল হক স্বীকার করে বলেন, চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে দ্রুত  শুন্যপদে চিকিৎসক দেয়ার জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসী ও রোগীদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ক’জন রোগী জানান, সরকারি ঔষধ থাকলেও তাদের ঠিকমতো দেয়া হয় না। প্রায় সব ঔষধ বাইরের দোকান থেকে ক্রয় করতে হয়।

হাসপাতালের বাহ্যিক পরিবেশ ভাল হলেও, টাইলস্ লাগানো টয়লেট থাকলেও তা পরিস্কারের অভাবে নোংরা অবস্থায় থাকে। বিছানার চাদরগুলো দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার ও পরিস্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

স্থানীয় পল্ল¬ী চিকিৎসকদের মধ্যে নামপ্রকাশ্যে অনিচ্ছিুক ক’জন জানান, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মর্তুজা-আল মামুন স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের কাছেই চিরিরবন্দর ডায়াগণষ্টিক সেন্টারের শেয়ার হোল্ডার হওয়ায় হাসপাতালে ওনার মনোযোগ কিছুটা কম। এছাড়াও কোন হুইল চেয়ার ও স্ট্রেচার না থাকায় গুরুতর রোগীদের জরুরী বিভাগে নেয়া এবং ভর্তিকৃত রোগীদের ওয়ার্ডে নেয়ায় প্রচন্ড অসুবিধার সৃষ্টি করেছে।

এলাকাবাসী এখানে চিকিৎসক সংকট দূর করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপির সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। 

 

 

এবিএন/রফিকুল ইসলাম/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ