লালমনিরহাটে সরকারী শ্রমিক দিয়ে ঠিকাদারী কাজ করান প্রকৌশলী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:১৮
লালমনিরহাটের আদিতমারীতে রুলার ইমপ্রোমেশন রোড় ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরইআরএমপি)-৩ এর সরকারী শ্রমিক দিয়ে ঠিকাদারের কাজ ও প্রকৌশলীর রান্নার কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে ওই উপজেলার প্রকৌশলী সোহেল রানার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও গ্রামীন সড়ক সংস্কার করতে ম্যান্টেনেন্স প্রজেক্টের আওতায় উপজেলার ৩ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার ৪২৪ টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারা ভাবে করানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
আরইআরএমপি ৩ এর ভাদাই ইউনিয়নের শ্রমিক সর্দার লাভলী বেগম বলেন, আমার দলে ১০জন শ্রমিকের একজন প্রকৌশলীর অফিসে রান্নার কাজ করেন। বাকী ৯ জন অন্য সড়কে কাজ করলেও গত ১৫ দিন ধরে উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশে নতুন এ সড়কে কাজ করছি। নিয়ম অনিয়ম আমরা জানি না।
জানা গেছে, উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতরের অধিনে প্রামীন সড়ক সংস্কার করতে ম্যান্টেনেন্স প্রজেক্টের আওতায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ ২১হাজার ৪২৪ টাকার ১৩টি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে দরপত্র আহবান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর। ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে উপজেলা পরিষদ হতে হ্যালিপ্যাড হয়ে মহিষখোচা সড়কের (সড়ক নং ১৫২০২৩৩০১০) সংস্কারের বিপরীতে সরকারী বরাদ্ধ ধরা হয় ২৮ লাখ ২৩হাজার ৯৩২টাকা। কিন্তু সড়কটির কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেহেদুজ্জামানের সাথে বরাদ্ধের চেয়ে এক লাখ ৪৮ হাজার ৬২৯টাকা অতিরিক্ত অর্থে চুক্তি করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর।
অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্ধ দিলেও উপজেলা পরিষদ হতে হ্যালিপ্যাড হয়ে মহিষখোচা সড়কের (সড়ক নং ১৫২০২৩৩০১০) সংস্কার কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের বিস্তার অভিযোগ। নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রী ও অতিরিক্ত তাপে গলানো নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করায় কাজ শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে পাথর। ভাল ভাবে রোলার না করায় সড়কটি উচু-নিচুই রয়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
উক্ত প্রকল্পে সড়কটির দুই ধারে ৩ফিট করে ৬ফিট মাটি ভরাটে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা বরাদ্ধ থাকলেও তা না করেই গত সপ্তাহে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে চুড়ান্ত বিলের আবেদন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। সেই মাটি ভরাটের কাজটি সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানার নির্দেশে কাজ করছেন আরইআরএমপি ৩ এর নারী শ্রমিকরা। গত ১৫ দিন ধরে এসব শ্রমিক দিয়ে সড়কটিতে মাটি ভরাটের কাজ করানো হচ্ছে। এতেই শেষ নয় আরইএমপি'র শ্রমিক পারুল বেগমকে সড়কের মাটির কাজের পরিবর্তি উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসে রান্নার কাজ করানো হচ্ছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ।
একই অভিযোগ ম্যান্টেনেন্স প্রজেক্টের ভাদাই ইউনিয়নের মান্নানের মিল থেকে বুড়িরদিঘী সড়ক (রোড নং-১৫২০২৩৩০১০) সংস্কার প্রকল্পে সরকারী বরাদ্ধ ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার ২২টাকা ধরা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএস ব্রাদার্সের সাথে কাজটির চুক্তি করা হয় ৫৬ লাখ ৪০ হাজার ২৪ টাকা। অতিরিক্ত বরাদ্ধের সেই সড়কেও প্যালাসাইডিং ঢালাই শুরু হলে নিম্নমানের কাজের কারনে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে প্রকৌশলীর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। নামে মাত্র রড দিয়ে প্যালাসাডিংয়ের পিলার লাগানো হয়েছে। নিম্নমানের খোয়া ও ঢালাইয়ে ভাইবেটর ব্যবহার না করায় ঢালাইয়ের ভিতরে ফাঁকা রয়েছে। যাতে সামান্যতেই ভেঙে যাওয়ার শ্বঙ্কায় স্থানীয়দের চাপে মঙ্গলবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন উপজেলা প্রকৌশল দফতর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাটের সিনিয়র একজন ঠিকাদার বলেন, টাকা ছাড়া এ উপজেলা প্রকৌশল দফতরের কেউ প্রকল্পে যান না। টাকা ছাড়া স্বাক্ষর হয় না কোন ফাইল। অনেক সময় মাটির কাজের বরাদ্ধের অর্থ ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়ে আরইআরএমপি'র নারী শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করে নেন এই উপজেলা প্রকৌশলী। কাজ করলে ঠিকাদারের লাভ হবে কিন্তু অনেক সময় মাটির অংশ প্রকৌশলীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন ঠিকাদাররা।
আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, প্রকল্পটির কাজ সদ্য সম্পন্ন করে ঠিকাদার মাটি ফেলে চলে গেছেন। সেটা সমান করে দিতে আরইআরএমপি'র শ্রমিকদের লাগানো হয়েছে। আর অফিসে রান্নার কাজে যে শ্রমিক রয়েছেন তা দীর্ঘ ১৫/২০ বছর ধরে চলছে। আগের প্রকৌশলীদের করা নিয়মে চলছে। তবে মাটির টাকা বা ফাইল প্রতি অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। প্যালাইডিং কাজে নিম্নমানের অভিযোগে ওই কাজটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতরের(এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী বলেন, আরইআরএমপি-৩ এর শ্রমিক দিয়ে চলমান ঠিকাদারী কাজে নিয়োগ করা ঠিক নয়। এ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকের শোকজসহ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিএন/আসাদুজ্জামান সাজু/জসিম/জুয়েল
এই বিভাগের আরো সংবাদ