আজকের শিরোনাম :

নতুন ঘর পেয়ে চোখে আনন্দের ঝিলিক রাহেনা বেগমের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৯

তারাগঞ্জ (রংপুর), ২৪ আগস্ট, এবিনিউজ : নতুন টিনের ঘর। হাতে চাবি। তারাগঞ্জের ফকিরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রাহেনা বেগমের চোখ স্থির। আনন্দে চকচক করছিল। আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না।

চোখের কোনেজমে থাকা পানি টপকরে পড়ে। শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, ‘জেবনে পোরথোম নয়া ঘরোত শুতি থাকিম। স্বামীর বাড়িত যখন আলচি তখনও বুড়া ঘর। বিশ^াসে হওচে না ম্ইু নয়া ঘরোত থাকিম। মনে হওচে স্বপ্নে পাওয়া ঘর। আল্লাহ তোমার ভালো করুক।’

জগদীশপুর গ্রামের আরেক গ্রহবধূ আরজিনা বেগমেরও চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। নতুন ঘরের চাবি হাতে পেয়ে তাঁরও চোখে গড়িয়ে পড়ছে পানি। সেই চোখের পানি মুচতে মুচতে বলেন, ‘আগোত ঝড়-বৃষ্টি আইলে মুই রাইতোত ঘুমির পাছনু না। ভাঙা ঘর দিয়্যা পানি ঢুকি গাও বিছনা ভিজি গেছলো। তাও কায়ও মোর কষ্ট দেখে নাই।  তোমরা ফির কোন দলের লোক বাহে কথা-বার্তা নাই মোক আসি নয়া টিনের ঘর বানে দিনেন।

তোমরা যে দলের লোকে হন না কেনে আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক। নতুন ঘরোত শান্তিতে ঘুমাইম। যদ্দিন বাঁচি আচুন তদ্দিন তোমার জন্য আল্লাহর কাছোত দোয়া করিম।’

কানাডাপ্রবাসী আকরামুল ইসলাম খানের পাঠানো এক লাখ ২০হাজার টাকায় তৈরি করা ঘরের চাবি অসহায় ওই দুই পরিবারকে হস্তান্তর করার সময় গৃহবধূ রাহেনা বেগম ও আরজিনা খাতুন ওই কথাগুলো বলেন। 

ঘর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে ফকিরপাড়া গ্রামে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আমরাও পারি সামাজিক সংগঠনের সভাপতি শিকড় ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ঠাকুরগাঁও জেলার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা, ইকরচালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন, ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান, আমরাও পারি সামাজিক সংগঠনের সাধারন সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, নুর আলম, মিহাদ সরকার।

ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, আকরামুল ইসলাম খান ভাই মানব সেবায় অনন্য। তিনি একেরপর এক অসহায় মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছে। 
ইকরচালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আকরামুল ভাই শুধু দানবীরই নন। তিনি শিক্ষানুরাগীও। তাঁর পাঠানো টাকায় রংপুর অঞ্চলের ৮৫জন গরিব শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় লেখাপড়া করছে। 

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন বলেন, আকরামুল ভাইয়ের তুলনা হয় না। তাঁর প্রচেষ্টায় তারাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবী ‘আমরাও পারি’ একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। এই সংগঠনের সদস্যরা অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। সমাজ উন্নয়নেও অবদান রাখছে।

‘আমরাও পারি’ সামাজিক সংগঠেনর সভাপতি শিকড় ইসলাম বলেন, ‘আকরামুল স্যারের মতো মানুষ সমাজে খুবই প্রয়োজন। আমরা তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানব কল্যাণে কাজ করছি। স্যারের সহযোগিতায় তারাগঞ্জে আমরা এ পর্যন্ত চারজনকে ঘর তৈরি করে দিয়েছি। শীতে কম্বল, বন্যায় ত্রাণ দিয়েছি। এলাকার গবির মানুষের মেয়ের বিয়েতে সহায়তা করেছি। বাল্যবিবাহ রোধে এলাকায় সচেতনা বৃদ্ধিতে কাজ করছি।

এবার ঈদে আমরা অসহায়দের মধ্যে মাংস বিতরণ করেছি। কিছুদিন আগে দুইজন মেয়েকে আমাদের সংগঠন বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। এর মধ্যে একজনের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করার জন্য আমরা গাভি কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। আপনার স্যার ও আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন সমাজ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যেতে পারি।’ 


এবিএন/বিপ্লব হোসেন অপু/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ