আজকের শিরোনাম :

স্বাবলম্বী হচ্ছে ‘আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পে’র হতদরিদ্ররা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:৫৮

বাগেরহাটের চিতলমারীতে ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পে’র ক্ষুদ্র ঋণ দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ উপজেলার বেকার যুবক-যুবতী, গৃহিণী ও দরিদ্র চাষিরা এ প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন। এ প্রকল্পের আওতায় হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন প্রকল্পে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে অনেক অসহায় নারী-পুরুষ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। পাশাপাশি পরিবারের দারিদ্রতা দুর করে নিজেদের করেছেন স্বাবলম্বী। এতে এ এলাকার বেকারত্বের সংখ্যাও অনেকাংশে কমেছে। ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের চিতলমারী উপজেলা অফিস সুত্রে জানাগেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার এক দিকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে যেমন সুসংগঠিত করছে। অন্যদিকে সঞ্চয়ের উৎসাহ প্রদান করে সদস্যদের যুবউন্নয়নের মাধ্যমে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছেন।

এ উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৩০টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার ৭৪২ জন। এসব সমিতির এ পর্যন্ত তহবিল দাড়িয়েছে ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালশিরা গ্রামের কবিতা মন্ডল জানান, ‘আমার বাড়ি, আমার খামার থেকে তিনি উপকৃত হয়েছেন। এখান থেকে ঋণ নিতে কোন কাগজপত্র, ঘুষ দিতে হয়না। সেখান থেকে তিনি সহজ শর্তে দুই দফায় ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগির খামার করেছেন। এরফলে আগে যেখানে সংসারে অভাব লেগেই থাকতো, এখন আর তেমন অভাব নেই বললেই চলে।

একই এলাকার বনানী মন্ডল জানান, এই প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে তিনি ও তার স্বামী মিলে একটি পাংগাস মাছের খামার গড়ে তুলেছেন। প্রথম দফায় মাছ বিক্রি করে তাদের আসল টাকা উঠে গেছে। এখনও অনেক মাছ রয়েছে। এই মাছ বিক্রি করে তারা লাভবান হবেন। আগামী বছরও তিনি বেশি পরিমানে ঋণ নিয়ে আরো বেশি জমিতে মাছ চাষ করবেন। নহতদরিদ্র কল্পনা ব্রক্ষ জানান, ‘আমার স্বামী কোন কাজ করতে পারেন না। আমরা অতি দরিদ্র মানুষ। আগে এক সময় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো। কালশিরা রুহেরকুল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আর কিছু কাটা জোগাড় করে একটি গাভি কিনেছিলাম। দুধ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেছি। পরে আবার ঋণ নিয়ে আরো গরু কিনেছি। এখন আমার খামারে ৬টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গাভিতে দুই হয়। এখন আর আগের মত সংসারে অভাব নেই।

‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের স্থানীয় মাঠ সহকারী ইন্দ্রজিৎ মন্ডল বলেন, চিতলমারী উপজেলার এই এলাকায় হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। এখানের মানুষ আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিতে নিতে ঋণের জালে জড়িয়ে আরো দরিদ্র হয়ে যাচ্ছিল। এখান থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে। তিনি সদস্যদের ঠিকমত বুঝাতে পারায় সারা দেশের মধ্যে তৃত্বীয় অবস্থান করেছেন বলে জানান। চিতলমারী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম উদ্দিন শেখ জানান, তার ইউনিয়নের অনেক লোক ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, কৃষিও মৎস্য খামার গড়ে তুলে সফল হয়েছেন।

‘আমার বাড়ি আমার খামার’ ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চিতলমারী শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘সরকার এ প্রকল্পের আওতায় তহবিল সংগ্রহ ও খামার গড়ে তোলার মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য চিতলমারীর দরিদ্র মানুষের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।’ চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্প দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচি। চিতলমারীতে এ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্প দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।

এবিএন/এস এস সাগর/জসিম/জুয়েল

এই বিভাগের আরো সংবাদ