আজকের শিরোনাম :

চিরিরবন্দরে ২১৫টি গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে পাঁকা বাড়ি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ২০:১৫

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে পাঁকা বাড়ি পাচ্ছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ২১৫টি গৃহহীন পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই উপহার পেয়ে খুশি ভূমিহীন পরিবারগুলো। প্রধানমন্ত্রীর উপহার  হিসেবে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য এ ঘরগুলি নির্মিত হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের গৃহহীনদের জন্য নির্মিত বাড়ির কাজ চলছে। কোথাও বা কাজ শেষের দিকে। উপজেলার তেতঁলিয়া ইউনিয়নের বৈকুন্ঠপুর গ্রামের ভূমিহীন খুকিবালা রায় পাটখড়ি ও বাঁশের বেড়া এবং জরাজীর্ণ টিনের চালা একটি বাড়ির সামনে বসে রোদ পোহাচ্ছেন। তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিয়ের কয়েক বছর পর স্বামী মারা যায়।

সন্তানেরা আলাদা থাকায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে কুঁড়েঘরে জীবনযাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পাকা বাড়ি ও জমির খবরে যেন খুশির শেষ নেই তার।খুশিতে কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মুই বাড়ি পায়া খুবই খুশি হইছু। মুই স্বপনেও ভাবো নাই কোনোদিন ইটের বাড়ি পাইম। প্রধানমন্ত্রীকে আশীর্বাদ করোছো।’ একই ইউনিয়নের গোন্দল গ্রামের ৫৮ বছর বয়সী আদিবাসি মহিলা মাইনো বাসরা বলেন, ‘মুই বুড়া (পুরাতন) টিন আর সিনডার (পাটখড়ি) চাটি (বেড়া) দিয়া ঝুঁপড়ি ঘর করি আছুনু। বাইরোত ভাত আন্দি (রান্না) খাছো। মুই মেলা কষ্ট করি জীবন চালাছো। মাসখানেক আগত ইউএনও মোর বাড়িত আসি ছবি তুলি নিছে আর কয়া গেইছে মোক নাকি শেখের বেটি বাড়ি দ্যাছে। এ্যালা নয়া ঘর তৈরি হইছে। ভগবান শেখের বেটির ভাল করুক।’ তার মতো উপজেলার ২১৫টি দরিদ্র গৃহহীন পরিবার মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে পাচ্ছেন পাকা বাড়ি। এতে উচ্ছ্সিত তারা।

দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর নির্মাণে প্রতিটি ঘর বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য থাকছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর, টয়লেট, কিচেন ও স্টোর রুম। এরই মধ্যে কাজের অগ্রগতি প্রায় শেষেরদিকে। নির্মাণাধীন ঘরগুলো সার্বিকভাবে তদারকি করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দীকা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইরতিজা হাসান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মনোয়ারুল ইসলাম।

সরেজমিন তেতুঁলিয়া ইউনিয়নের বৈকুন্ঠপুর ও গোন্দল গ্রাম, ইসবপুর ইউনিয়নের বারাইপাড়া কাশিয়ারডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়-ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত ঘরগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যার বাড়িতে কখনও ইটের ঘর কল্পনা করা যায় না, সেখানে শোভা পাচ্ছে সুন্দর ইটের তৈরি ঘর। ঈসবপুর ইউনিয়নের বিধবা শরিফা বেওয়া আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমার স্বামী মারা যাবার পর বহু কষ্টে সন্তানদের নিয়ে জীবনযাপন করছি। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এই পাঁকা ঘরে থাকতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাঁকা ঘর উপহার দিয়েছেন। একই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন ফুলজান বেগম (৭০), মরিয়ম বেগম (৬০) এবং ইয়াছিন আলী।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. মনোয়ারুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় এঘরগুলি নির্মিত হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দীকা জানান, ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পাঁকা গৃহ নির্মাণের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সময়মতো কাজ শেষ করার পাশাপাশি নির্মাণ কাজের গুণগত মান ঠিক রাখতে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে একযোগে দেশব্যাপি এঘরগুলি উদ্বোধন করবেন।

এবিএন/মো. রফিকুল ইসলাম/জসিম/জুয়েল

এই বিভাগের আরো সংবাদ