আজকের শিরোনাম :

স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে অসহায় দিনের শিশু!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৪২

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও), ২০ আগস্ট, এবিনিউজ : স্বামীর নিকট ভরণ-পোষণের খরচ আদায় করার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ১০ দিনের কন্যা শিশুকে সাবেক স্বামীর বাড়ির সামনের বাঁশঝাড়ে ফেলে রেখে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মায়ের বিরুদ্ধে।

শিশুটির বাবা গ্রাম পুলিশ। মা ছাড়া ১০ দিনের শিশুটি ও তার বাবা বিপাকে পড়েছে।  

গতকাল ১৯ আগস্ট (রবিবার) সকাল ১০টায় উপজেলা ভানোর ইউনিয়নের বাঙ্গাটুলি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাচ্চাটি ওই গ্রাম পুলিশের বাড়ীতেই রয়েছে বলে মুঠোফোনে জানান নবজাতকের মা রেহেনা বেগম (২৩)।

সে ভানোর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর আলমের ২য় স্ত্রী দাবি করছেন। কিন্ত জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি অস্বীকার করে বলছেন রেহেনা বেগম নিজেই গত জুন মাসে তাকে তালাক দিয়েছে।

বিয়ে ও তালাকের বিষয় নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হলে জটিলতা নিরসনের জন্য রেহেনা বেগম বাদী হয়ে গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের লোকজনকে আসামী করে ঠাকুরগাও বিজ্ঞ  নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে একটি ও একটি নির্বাহী আদালতে ১০৭ ধারার মামলাও করেছেন। যাহা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

স্থানীয় লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে ওই এলাকার মৃত খলিপউদ্দীনের মেয়ে রেহেনা বেগমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।পরে গত ৬ ফেবুুয়ারি ঠাকুরগাঁও নোটারী পাবলিক এফিডেভিট মুলে বিবাহ করে। বিবাহের পর তিন মাস স্বামীর বাড়ীতে এবং তিন মাস রেহেনার নিজ বাবার বাড়ীতে জাহাঙ্গীরের দেয়া ভরণ-পোষণে সংসার করেছেন রেহেনা বেগম। গত ২ মাস ধরে ভরণ পোষণ দেয়া বন্ধ করেন জাহাঙ্গীর।

গত ১০ আগস্ট বাচ্চা প্রসবের পর কোনো খোঁজ খবর নেয়নি রেহেনার স্বামী জাহাঙ্গীর। তাই স্বামীর বাড়ী থেকে বাচ্চার ভরণ পোষণ আদায়ের জন্যই এ পরিকল্পনা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রেহেনা তার ১০ দিনের কন্যা সন্তানকে স্বামীর বাড়ীর সামনে ফেলে দিয়ে আসেন।

রেহেনা বেগম জানান, দীর্ঘ এক বছর জাহাঙ্গীরের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক। প্রেমের কারণে দীর্ঘদিন আমার সাথে রাত কাটায় জাহাঙ্গীর। আমি অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে তার প্রথম স্ত্রীসহ আমাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে জাহাঙ্গীর। এর পর সুখেই ছিলাম আমি। কিন্তু গত ০২ মাস ধরে আমার ভরণ-পোষণ খরচ এমনকি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সে।

গত ১০ দিন আগে আমার বাচ্চা প্রসবের পর আমি একবারে অসহায় হয়ে পড়ি। এতে বাধ্য হয়ে আমি বাচ্চাকে নিয়ে আমার স্বামীর বাড়িতে থাকার চেষ্টা করলে আমাকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেয় আমার স্বামী ও তার ১ম স্ত্রী। এ সময় শারীরিক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বাচ্চা ফেলে চলে আসি।

রেহেনা বেগম আরও বলেন, আমি বালিয়াডাঙ্গী থানায় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গিয়েছিলাম। তাঁরা বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। রেহেনা বেগমের প্রতিবেশী খাদেমুল ইসলাম জানান, গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন রেহেনার সাথে রাত্রিযাপন করেছেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি নিষেধ করলে জাহাঙ্গীর রেহেনাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। সে সময় বিয়ে দিতে না করার গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করবে এমন হুমকিও দিয়েছিল জাহাঙ্গীর।

গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর আলম বিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, বিয়ের পর স্বামীর কথা মানতেন না রেহেনা বেগম। এমনকি গত ১৫ মে আমাকে এফিডেভিট মুলে সে নিজে তালাক দিয়েছে। ডাকযোগে তালাকের কাগজপত্র পাওয়ার পর ভরণ-পোষণের খরচ বন্ধ করে দেয় আমি।

তিনি আরও বলেন, গতকাল ২০ আগস্ট (রবিবার) স্থানীয় কিছু লোকের বুদ্ধিতে আমার বাড়ীর পার্শ্বে বাঁশঝাড়ে তার ১০ দিনের শিশু রেখে যায় রেহেনা।

ভানোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব সরকার বলেন, বাচ্চা ফেলে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে এ আগের স্বামী স্ত্রীর সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা করেছেন তিনি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ. মান্নান বলেন, বাচ্চাটি নিয়ে গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর আমার দপ্তরে এসেছিল। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে বর্তমানে বাচ্চাটির একটি সু-ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সাথে বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা করার চেষ্টাও চলছে।

এবিএন/রমজান আলী/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ