আজকের শিরোনাম :

সুনামগঞ্জে প্রতিবন্ধী পরিবারের উপর হামলার অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০১৮, ১২:৫৩

সুনামগঞ্জ, ১৯ আগস্ট, এবিনিউজ : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে এক প্রতিবন্ধী পরিবারের উপর মাদ্রাসার সুপারসহ শিক্ষক-ছাত্রদের হামলায় বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও মিথ্যা মামলা দিয়ে উল্টো হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের চামতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পার্শ্বে প্রতিবন্ধী পরিবার প্রধান জিয়াউল হকের বসতবাড়ী ও রেডকীয় জমি রয়েছে। জিয়াউল হকের রেকর্ডীয় ভূমি নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে প্রায় এক যুগ ধরে দ্বন্ধ চলে আসছে। জিয়াউল হকের রেকর্ডীয় ৩৬৩নং দাগের ১৫ শতক ভূমি মাদ্রাসার খেলার মাঠে চলে যাওয়ায় দন্ধের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গত প্রায় ১০ বছর যাবৎ বিরোধ চলে আসছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বার বার বিচার পঞ্চায়েত করে ভূমি বিরোধটি নিস্পত্তির চেষ্টা করেন। তারই জের ধরে গত প্রায় দুই মাস পূর্বে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হকের নির্দেশে মাদ্রাসা সুপার আব্দুল হকের সাথে ভূমির মালিক জিয়াউল হকের আপোষ নিস্পত্তির মাধ্যমে একটি আনরেজিস্টার বিনিময় দলিল সম্পাদন করেন মাদ্রাসার সুপার আব্দুল হক। বিনিময় দলিলের মাধ্যমে জিয়াউল হকের স্বত্ব দখলীয় ৩৬৩নং দাগের ১৫ শতক ৯ পয়েন্ট জায়গা মাদ্রাসাকে এবং মাদ্রাসার ৩৫৫নং দাগের ১৫ শতক ২০ পয়েন্ট ভূমি জিয়াউল হককে বুঝিয়ে দেয়া হয়। মাদ্রাসার জায়গাটি নামজারী না থাকায় রেজি: সাফকবালা দলিল সম্পাদন করা সম্ভব হয়নি। তদ্রুপ জিয়াউল হকও মাদ্রাসাকে রেজি দলিল দেয়নি।

ফলে জিয়াউল হককে দেয়া ১৫ শতক ২০ পয়েন্ট জায়গার উপর মাটি কেটে ভিট তৈরি একটি টিনের ঘর তৈরিক্রমে শান্তিপূর্ণভাবে চারজন প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। অপর দিকে জিয়াউল হকের দেয়া ১৫ শতক জায়গার উপর মাদ্রাসার খেলার মাঠ ও ৯ পয়েন্ট বিল্ডিং এর একটি সিড়ি তৈরি করে ভোগাদিকার আছে। মাদ্রাসার সুপার গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আনরেজিস্টার জায়গাটি গ্রাস করার হীন উদ্দেশে স্থানীয় সেটেলমেন্ট অফিসে জিয়াউল হকের জায়গাটি মাদ্রাসার নামে বিনা নোটিশে কেটে নেয়ার চেষ্টা করেন।

কিন্তু জিয়াউল হককে মাদ্রাসার দেয়া জায়গার কোন মাঠ পর্চা কিংবা দলিল দেয়া হয়নি। এ নিয়ে মাদ্রাসার সুপার আব্দুল হক গত ১ আগস্ট (বুধবার) দুপুরে সুড়িগাও মৌজাস্থিত ৩৫৫নং দাগের ভুমিতে নির্মিত টিনের ঘরটি শিক্ষক-কর্মচারী, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ছাত্রদের নিয়ে বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাটসহ যাবতীয় মালামাল নিয়ে যায় এবং প্রতিবন্ধী ৪জনকে রামদা, সুলফি ও কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে চলে যায়। গুরুতর আহত জিয়াউল হকের স্ত্রী গোলাপজান বিবি, প্রতিবন্ধী আমিরুল, প্রতিবন্ধী সালমা, প্রতিবন্ধী রাশিদাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এ ঘটনায় জিয়াউল হক বাদী হয়ে ঘটনার পর দিন দোয়ারবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে অভিযোগটি আমলে না নিয়ে দোয়ারাবাজার থানা ওসি টালবাহানা শুরু করে। পরবর্তীতে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারের নির্দেশে গত ৮ আগস্ট দ:বি: ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৫৪/৩৮০/৪১৭,১১৪ ধারায় মামলাটি রুজু করা হয়। যার মামলা নম্বর ৯৩।

মাদ্রাসার সুপার আব্দুল হককে প্রধান আসামি করে শিক্ষক মফিজুল, মাও. আব্দুস ছামাদ, কর্মচারী দুলাল, মাও. মকিব মিয়া, গরুচুরির মামলাসহ প্রায় ৭টি মামলার আসামী হোসেন আহমদ ও অফিস সহকারী বাবুল মিয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১২জনকে বিবাদী করে মামলাটি রুজু করা হয়। মামলাটি রুজু করলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হকের প্রভাবে থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত কোন আসামীকে গ্রেফতার না করে উল্টো প্রতিবন্ধী পরিবারের ১১ জনকে বিবাদী করে মামলার ১নং আসামী আব্দুল হক বাদী হয়ে দোয়ারাবাজার থানায় মামলা রুজু করে। যার মামলা নম্বর ৯৪ এবং গত ১০ আগস্ট মামলাটি এফআইআর করে প্রতিবন্ধী অসহায় পরিবারদের হয়রানী করছেন। এ মামলায় জিয়াউল হকের প্রতিবন্ধী ৪ সন্তানসহ ১০ জন গত ১৬ আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করে মুক্তি দেন।

জিয়াউল হক জানান, আমরা গরীব ও অসহায় বিধায় থানায় ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে থানা পুলিশ আমার মামলাটি রুজু করলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে এলাকায় যায়নি। আসামিরা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি ও আমার পরিবার তাদের ভয়ে বাড়িতে ফিরতে পারছি না। আমি আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থণা করছি।

এ ব্যাপারে চামতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুল হক জানান, জিয়াউল হকের সাথে চামতলা মাদ্রাসার জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। মাদ্রাসার মাঠে ৩৫৫ নং দাগে জিয়াউল হকের রেকডীয় ১৫ শতক জায়গা আছে এবং মাদ্রাসা এরিয়ার বাইরে মাদ্রাসার জায়গা ৩৬৩নং দাগে ১৫ শতক ভূমি আনরেজিস্টার বিনিময় দলিল করা হলেও কথা হয় যে, আগামী অগ্রহায়ন মাসে উভয় পক্ষ দলিল রেজিষ্ট্রি করা হবে। তার আগে উভয় উভয়ের অবস্থানে থাকার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জিয়াউল হক মাদ্রাসার জায়গার উপর বাড়ি তৈরি করার চেষ্টা করে। তাই আমরা মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা ঘর তুলতে নিষেধ করতে গেলে আমাদের চোখে মুখে মরিচের গোড়া ছুড়ে মারে। ফলে আমরা কয়েকজন আহত হই।

ঘর তৈরির আগে কেন বাধাঁ দেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হককে জানানো হয়েছিল কিন্তু জিয়াউল হককে না পাওয়াতে ঘর তুলার বিষয়ে বাধা দেয়া যায়নি।

বিনিময় দলিল করার পর জিয়াউল হকের জায়গার উপর মাদ্রাসার সিড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে কিন্তু জিয়াউল হককে দেয়া জায়গার উপর ঘর তৈরী করতে বাধাঁ দিলেন কেন জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, যেহেতু জায়গার রেজিষ্ট্রি হয়নি  সে জন্যই তাকেঁ বাধা দেয়া হয়েছে। উল্টো প্রতিবন্ধীদের উপর মামলা দিলেন কেন? মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র ও কর্মচারী আহত হয়েছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদ্রাসা কেন অন্যের জায়গা দখল করতে যাবে?  আমি জায়গার মালিক জিয়াউল হককে বার বার ডেকেছি বিষয়টি নিস্পত্তি করার জন্য কিন্তু তিনি আসেন নি। তবে মাদ্রাসার সুপার কিভাবে বিনিময় দলিল করেন? তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে ঈদের পর উভয় পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি নিস্পত্তি করে দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খাঁন জানান, প্রতিবন্ধী পরিবারের উপর কোন অন্যায় হতে দেয়া হবে না। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমি দোয়ারাবাজার থানার ওসিকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছি।

এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ