ঝালকাঠিতে বেআইনিভাবে গরু মোটাতাজাকরণ চলছে
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০১৮, ২১:১৭
ঝালকাঠি, ১৬ আগস্ট, এবিনিউজ : পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঝালকাঠি জেলা জুড়ে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ, ইনজেকশন ও খাবার খাইয়ে কোরবানীর পশু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে মাঠে নেমে একশ্রেণির সিজনাল পশু ব্যবসায়ী ও খামার মালিক।
সরকারি-বেসরকারি কতিপয় পশু ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিনের নামে সরকারের ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন এসব অবৈধ ওষুধ চড়া দামে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে। মানবদেহে জটিল রোগবালাই সৃষ্টির ঝুঁকিপূর্ণ এসব ওষুধ কোম্পানীর কাছ থেকে মোটা অংকের পার্সেন্টিজের বিনিময়ে কতিপয় পশু ডাক্তারের খামার মালিকদের এসব ওষুধ ক্রয়ে উৎসাহীত করলেও এবিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, ১৫ বছর পূর্বে দৈনিক গোশতের গড় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৯ লক্ষ মেট্রিকটন থেকে বর্তমানে মোটাতাজা করণ পদ্ধতির মাধ্যমে দৈনিক গোশতের গড় উৎপাদনের পরিমাণ হয়েছে ১১ লক্ষ মেট্রিকটন। কোরবানি উপলক্ষে এ জেলায় মোট কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ৪৬ হাজার ৮শ’ ৪৭টি।
এরমধ্যে ৩৭ হাজার ৬শ’ ২১টি গরু এবং ছাগল-ভেড়া ৯ হাজার ২শ’ ২৬টি। ঝালকাঠি জেলায় এ বছর ৫৫৪টি খামারে ৪ হাজার ৫শ’ ৮৯টি গরু মোটাতাজা করা হয়েছে খামার মালিকরা।
ঝালকাঠির একাধিক গোখাদ্য ও ঔষধের দোকান ঘুড়ে দেখা যায়, বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর নীচে ৩শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকার ভিটামিন ইনজেকশন ও ঔষধ বিক্রি হচ্ছে। এসব ঔষধের গায়ে লেখা আছে মাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও দ্রুত মোটাতাজাকরণে ব্যবহার্য।
ঝালকাঠির শিতলাখোলা সড়কে মেডিসিনের গোখাদ্য ও ঔষধ বিক্রেতা এনায়েত হোসেন জানান, এসব ঔষধ যত বেশি খায়ানো হবে ততবেশি ও দ্রুত গরু মোটা হবে।
একই সড়কের গোখাদ্য ও ঔষধ বিক্রেতা তানজির মেডিসিনের আজাদ রহমান জানান, এসব ঔষধ কোনো ক্ষতিকর বা নিষিদ্ধ না হলেও ডেক্সামিথাসন, ডেকাসনসহ কিছু ঔষধ বিক্রি নিষিদ্ধ। এছাড়া আরো কিছু ঔষধ আছে যা গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ব্যবহার্য্য হলেও আমরা রেজিষ্ট্রার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া তা বিক্রি করিনা। তাহলে এসব ঔষধ খামারীরা কি ভাবে পাচ্ছে তা জানতে চাইলে বিক্রেতারা এ বিষয়ে কোন জবাব না দিয়ে নিরব থাকেন।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, আমাদের এ অঞ্চলে গোখাদ্যের সংকট থাকায় খামরীরা দ্রুত মোটাতাজা করণের জন্য বাজারে যে ভিটামিন ঔষধ ও ইনজেকশন পাচ্ছে তাই খাওয়াচ্ছে। তা কতটা স্বাস্থ্য সম্মত সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবে ক্ষতিকর কিছু ঔষধ বা ইনজেকশন আছে যা জরুরী মূহুর্তে গরুর সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থাপত্রে দেয়া হয়। ঐসব ঔষধ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, আমাদের লোকজন মাঠ পর্যায়ে কোরবানীর জন্য গরু মোটাতাজাকরণের বিষয়ে নজরদারি করছে। যেসব ঔষধ ও ইনজেকশন স্বাভাবিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণে নিষেধ বা রেজিষ্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিক্রি করা যাবেনা খামারীদের তা ব্যবহার না করতে নিষেধ করি। তারা না মানলে আমাদের কি করার আছে।
‘বিএসটিআইএ’র অনুমোদন ছাড়া কোনো বস্তাজাত গোখাদ্য কেহ বিক্রি করলে আমাদের জানান কি করা যায় দেখব। আপনাদের মাঠ পর্যায়ের লোকজন তাহলে কি করছে কোরবানীতো এসে গেছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, এরকম অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/এমসি