আজকের শিরোনাম :

রাজারহাটে হানাদারমুক্ত দিবস পালিত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৫৭

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে যথাযোগ্য মর্যাদায় হানাদার মুক্ত দিবস ৬ ডিসেম্বর রবিবার পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, প্রেসক্লাব রাজারহাট, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।

এর আগে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম, উপজেলা স্বাস্থ্য প. প. কর্মকর্তা ডা. মুহা. আসাদুজ্জামান জুয়েল, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রজব আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্টু কার্জ্জী প্রমূখ। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্থানী পাক হানাদার বাহিনী রাজারহাট ছেড়ে পালিয়ে যায়। হানাদার মুক্ত হয় এই অঞ্চল। ৭১’ এর ২৮ মার্চ কুড়িগ্রাম সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে স্থানীয় গওহর পার্ক মাঠে এক বিশাল জন সমাবেশের আয়োজন হয়েছিল। সেখান থেকেই আহাম্মদ আলী বকসী, অধ্যাপক হায়দার আলী, তাছাদ্দুক হোসেন ও জহির উদ্দিনকে নিয়ে স্থানীয় কমান্ড গঠন করা হয়। তাদেরই নির্দেশে বিভিন্ন থানা থেকে গোলাবারুদ, অস্ত্র সংগ্রহ করে তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহাম্মদ হোসেন সরকারের রাজারহাট উপজেলাধীনস্থ কেন্দ্রা গ্রামের বাড়িতে অস্ত্র মজুদ করা হয়। এরপর ওই বাড়িতে স্থানীয় যুবক ও ছাত্রদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কলা কৌশল শেখানো হয়। পরবর্তীতে রাজারহাটস্থ ওই বাড়ি থেকে প্রথমে পুলিশ, আনসার, ছাত্র ও স্থানীয় যুবকদের মধ্যে অস্ত্র বিতরণ করে কুড়িগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করা হয়েছিল। ২৮ মার্চ রংপুর ইপিআর উইং এর সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের এক বাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে সংবাদ পাঠান রাজারহাট আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে। ২৯ মার্চ সকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সদর ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক বিএনপি নেতা মরহুম আলী মনছুর, আছমত উল্লা সেখানে যান। ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে কুড়িগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবগত করেন।

৩০ মার্চ ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের নির্দেশে ওই অঞ্চল উইং এর অধীনস্থ অধিনায়ক নায়েক সুবেদার নূর মোহাম্মদ, সুবেদার আব্দুল মান্নান, সুবেদার আরব আলী, সুবেদার বোরহান উদ্দিন তাদের সহযোদ্ধা ইপিআরদের নিয়ে রাজারহাট হয়ে কুড়িগ্রামে আসেন। ১ এপ্রিল পাকিস্থানী বাহিনীর আক্রমণ ঠেকাতে তিস্তা ব্রিজের পাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলে। ওই সময় ইপিআর সদস্যরা রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করে। ৪ এপ্রিল পাক বাহিনী হারাগাছ দিয়ে তিস্তা নদী পার হয়ে লালমনিরহাটে অবস্থান নিলে মুক্তিযোদ্ধারা তিস্তার পূর্ব পাড়ের ঘাঁটি রাজারহাট ও কুড়িগ্রাম নিয়ে আসেন। এরপর পাক বাহিনী রাজারহাট দু’দফা আক্রমণ করে। অবশেষে মধ্য এপ্রিলে হানাদার বাহিনী রাজারহাট দখল করে নেয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী রাজারহাটে প্রবেশ করে তাদের দোসরদের সহযোগিতায় শত শত ঘর-বাড়িতে অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, সম্পদ লুট ও গণ হত্যা চালায়।

অবশেষে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দীর্ঘপদ পাড়ি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিগ্রেডিয়ার যোশির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৬ষ্ঠ মাউন্টেড ডিভিশনের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনীর উপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ৬ ডিসেম্বর রাজারহাট মুক্ত করে।

পাকিস্থানী পাক বাহিনীর গণহত্যা চালিয়ে শত শত বাঙালীকে হত্যা করে কুড়িগ্রাম-রাজারহাট সড়কের ঠাঁটমারী বধ্যভূমিতে বর্তমানে স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। রাজারহাট বাসী মুক্তির আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। সর্বত্রে ঘটবে নতুন জীবনের স্পন্দন।

এবিএন/রনজিৎ কুমার/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ