আজকের শিরোনাম :

অবহেলায় ধ্বংসের পথে ঐতিহাসিক নিদর্শন শিববাড়ি মন্দির

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২০, ১৫:২০

স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনসহ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জেলা দিনাজপুরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নিদর্শন। যা অতীতকে জাগ্রত-উজ্জীবিত করে। পূর্ব পুরুষদের সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে পুরনো আমলের এসব পুরাকীর্তি। সভ্যতা, কৃষ্টি-কালচার জানতে এবং বুঝতে সেসব পুরাকীর্তির বিকল্প নেই। এমনই এক স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শন শতবর্ষের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিববাড়ি মন্দির। শতবর্ষের প্রাগৈতিহাসিক শিববাড়ি মন্দিরটি চিরিরবন্দরের আলোকডিহি ইউনিয়নের গছাহার গ্রামে অবস্থিত। অন্তত ৩০০ বছরের পুরনো এ মন্দিরটির আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে মোঘল আমলের স্থাপত্যের এই ঐতিহাসিক নিদর্শন এখন ধ্বংস হতে চলেছে। দাঁড়িয়ে আছে এখন কালের সাক্ষী হয়ে।

জানা যায়, এটি আলোকডিহি ইউনিয়নের গছাহার মৌজায় ২২ শতাংশ জমির ওপরে নির্মিত। চিকন ও ছোট ছোট ইট, চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি। এটি বর্ণিল কারুকার্যে গড়া প্রতœত্বত্ত¦। পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট মন্দিরটিতে প্রবেশ ও বের হওয়ার পৃথক পথ রয়েছে। চমৎকার এর নির্মাণ শৈলী। সংস্কারের অভাবে মূল্যবান এ প্রতœসম্পদ অরক্ষিত আজও। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্ব^ীরা বিভিন্ন পূজা-অর্চনা করে থাকেন। বর্তমানে এটি শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। মন্দিরের ইট, সুরকি উঠে যাচ্ছে। আগাছা বাসা বেঁধেছে মন্দিরের শরীরে। প্রতিটি দেয়ালে বিভিন্ন গাছপালা। গাছপালা জন্মেছে ছাদের ওপরেও। বর্তমান অবস্থা নাজুক। তারপরও জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। বছরের পর বছর অযতœ আর অবহেলায় পড়ে থাকা এ মন্দিরের মূল স্থাপনা কোনোরকমে টিকে আছে। 

উপজেলার গছাহার ক্ষেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক সত্য নারায়ণ দাস (৭৬) জানান, মুস্তফী (ব্রাহ্মণ) সম্প্রদায়ের আপন দুই ভাই হেমবাবু ও সত্য নারায়ণ এবং তাদের চাচাতো ভাই তিনকুড়ি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এ মন্দিরটি পরিচালনা করেন। এর পূর্ব-দক্ষিণ পাশে এরকম আরও ২-৩টি ছোট মন্দির ছিল। এখান থেকে মুস্তফীরা চলে গেলে পরবর্তীতে খানসামার দুবলিয়া গ্রামের শিক্ষক যতীন্দ্রনাথ দাস, আলোকডিহির গছাহার গ্রামের তাঁতিপাড়ার রায় দাস দেবনাথ (ঠাকুর)-এর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে চলে মন্দিরের দেখাশোনা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। 

তাদের নেতৃত্বেই এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দুর্গাপূজা ও চৈত্র মাসের শিব চতুর্দশী ব্রত পালন করত। এ উপলক্ষে এখানে বসত মেলা। এ মেলা ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চলে। এরপর আঞ্চলিকতা ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে পিতাম্বর দেবনাথের ছেলে শিক্ষক সুবল চন্দ্র  দেবনাথের নেতৃত্বে তিনবার শিবলীলা প্রদর্শিত হয়। এখন আর বসে না কোনো মেলা। চলে না কোনো যাত্রাপালা ও সার্কাস। 

স্থানীয়রা জানান, এটি কে কখন নির্মাণ করেছেন তার কোনো নামফলক নেই। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও তা বলতে পারেননি। তবে অনেকেই ধারণা করছেন এটি ব্রিটিশ শাসনামলে কিংবা রাজা রামনাথের শাসনামলে নির্মিত হতে পারে।
মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার এবং সাবেক সভাপতি তপন কুমার দেবনাথ জানান, এই দেবোত্তর সম্পত্তিটির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। এলাকার ঐতিহাসিক মন্দির হলেও সংস্কারের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি অনুদান আসেনি। তবে বার্ষিক পূজার আয়োজন নিজেরা করে থাকি। 


এবিএন/ মো. রফিকুল ইসলাম/জসিম/জুয়েল

এই বিভাগের আরো সংবাদ