আজকের শিরোনাম :

দাউদকান্দিতে সালিশ বৈঠকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, আটক ২

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৯:৪৪

দাউদকান্দি (কুমিল্লা), ১১ আগস্ট, এবিনিউজ : সামাজিক বিচারের নামে সালিশ বৈঠকে মধ্যযুগীয় কায়দায় আসমা আক্তার নামে চার সন্তানের জননী প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। স্বামীর ভাইদের যোগসাজশে এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতে সালিশ বৈঠকে ওই নারীকে পিটিয়ে পুরো শরীর থেতলে দেয়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে এলাকায়। এঘটনায় উপজেলা মাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যেও তদন্ত কমিটি ঘঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

ঘটনাটি ঘটেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বেকিসাত পাড়া গ্রামে। নির্যাতিতা আসমা আক্তার ওই গ্রামের সামছু ব্যাপারীর পুত্র প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী। এ ঘটনায় আসমার বোন নারগিস আক্তার বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ দু’জনকে আটক করে।

জানা যায়, গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী আসমা আক্তারকে ‘পরকিয়ায় জড়িত’ অভিযোগে পার্শ্ববর্তী বারপাড়া গ্রামের আলম নামে এক ব্যক্তিকে ডেকে এনে জোর করে আসমার ঘরে আটকে রাখা হয়। অভিযোগ উঠেছে, আটক দুজনের উপর রাতভর দফায় দফায় নির্যাতন চালিয়েছেন প্রবাসী কবিরের ভাই সাইফুল, বাবুল, মিন্টু, মোস্তাক ও অপর এক ভাই খোকনের স্ত্রী শিল্পী।

পরদিন ১ আগষ্ট সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদারের উপস্থিতিতে সামাজিক বিচারের আয়োজন করা হয়। এসময় কয়েক’শ গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক চলাকালে প্রতিবেশি মিন্টু মাতাব্বরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাঠি নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় আসমার উপর নির্যাতন চালায়। এছাড়াও বেধড়ক পেটানো হয় আটক আলমকেও।

তাদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় ১ আগস্ট আসমার বোন বাদী হয়ে দাউদকান্দি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আসামি প্রবাসী কবিরের ভাই সাইফুল ও একই গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের পুত্র বাবুলকে আটক করে পুলিশ। মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছে একই গ্রামের মোবারকের পুত্র মিন্টু, বারেক মিয়ার পুত্র মোস্তাক ও নির্যাতিতা আসমার জাঁ শিল্পী।

 বৈঠকে উপস্থিত বারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার বলেন, বিষয়টা তাদের পারিবারিক ষড়যন্ত্রের অংশ। কবিরের চার ভাই ও এক ভাবি মিলে এ কান্ডটি ঘটিয়েছে। সকালে বৈঠক শুরুর পর হঠাৎ করেই কবিরের এক ভাই এসে আসমাকে মারধরের নির্দেশ দিতে থাকে। পরে আমার ইউনিয়নের তিনজন সদস্য ও আশপাশের লোকজন মিলে আহত দু’জনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার পাঠাই এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান করি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুব আলম জানান, মধ্যযুগীয় কায়দায় আসমা আক্তার নামের নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যানের বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোসাঃ কানিজ আফরোজকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনার প্রধান আসামি সাইফুলসহ অপর আসামি বাবুলকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অচিরেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এবিএন/জাকির হোসেন হাজারী/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ