বদলগাছীতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ
প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১৮
বদলগাছী (নওগাঁ), ১১ আগস্ট, এবিনিউজ : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার হাট বাজারগুলোতে সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে ক্রেতা-বিক্রেতা গনের কাছ থেকে হাট ইজারদারগণ তাদের ইচ্ছামত অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
বদলগাছী উপজেলার গোবরচাঁপা, কোলা, ভান্ডারপুর ও বদলগাছী সদর হাটের দিন সরজমিনে গিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের সত্যতা প্রমান পাওয়া যায়। অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে বছরের পর বছর অবহিত করা হলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেননি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
সরে জরেজমিনে গতকাল শুক্রবার (১০ আগস্ট) কোলার দেখাযায় সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বাংলা ১৪২৪ সাল হতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সরকারী হাটগুলোতে গরু, মহিষ ও ঘোড়া প্রতি ৩শ টাকা, ছাগল ও ভেড়া প্রতি ১৫০ টাকা, প্রতিমন ধানের বিপরীতে ৪ টাকা, প্রতিমন গমের বিপরীতে ১০ টাকা, অন্যান্য রবি শষ্যে তরকারী পোটল, বেগুন, মুলা ইত্যাদি কৃষিজাত শাকশব্জির নির্ধারিত টোল আদায় করতে পারবেন।
যেমন- মহিষ এর গাড়ী প্রতি ১৪ টাকা, গরুর গাড়ী প্রতি ১২ টাকা, টমটম গাড়ী প্রতি ১০ টাকা, তরকারির (বড়) দোকান প্রতি ১০ টাকা, তরকারির (ছোট) দোকান প্রতি ৬ টাকা ও তরকারি ডালি প্রতি ৪ টাকা, আলু, পেঁয়াজ, আদা মণে ৬ টাকা ও মহিষের গাড়ী ৪ মণ পর্যন্ত ১২ টাকা, শুকনা ও কাঁচা মরিচ মণ প্রতি ১২ টাকা করে ক্রেতা বা তরিতরকারির দোকানদারদের কাছ থেকে টোল আদায় করতে পারবেন।
কিন্তু বদলগাছী সদর হাটে টোল আদায় করা হচ্ছে বিক্রেতার কাছ থেকে ১৪-১৫ টাকা, আবার ক্রেতার কাছ থেকেও নেওয়া হচ্ছে ১৪-১৫ টাকা করে। ফলে প্রতি মন টোল আদায় হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা। বদলগাছী সদর, কোলা, ভান্ডারপুর ও গোবরচাপা হাটের ইজারদারগণসহ উপজেলার অন্যান্য ইজারদারগণ স্থানীয়ভাবে প্রভাব দেখিয়ে জোর পূর্বক গরু, মহিষ ও ঘোড়া প্রতি ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৩৮০-৪০০ টাকা, ছাগল ও ভেড়া প্রতি ১৫০ টাকার পরিবর্তে শতকরা ১০ টাকা।
এতে একটি ছাগল বা ভেড়া যদি দশ হাজার টাকা বিক্রি হয় তাহলে শতকরা ১০ টাকা হিসাবে এক হাজার টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। প্রতিমণ ধানের ৪ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা, প্রতিমন গমের বিপরীতে ৮ টাকার স্থলে ২০/৩০ টাকা, অন্যান্য রবি শষ্য তরকারী পোটল, বেগুন, মুলা ইত্যাদি কৃষিজাত শাকশব্জির গাড়ী প্রকারভেদ অনুযায়ী ১৪, ১২, ১০ টাকার বিপরিতে না নিয়ে মণ প্রতি ১৫/২০ টাকা, আলু, পেঁয়াজ, আদা প্রতি মণ ৬ টাকার স্থলে ২০/৩০ টাকা, শুকনা ও কাঁচা মরিচ প্রতি মণ ১২ টাকার স্থলে ২০/৩০ টাকা করে অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। হাট ইজারদারগণ প্রভাবশালী হওয়ার ফলে প্রতিবাদ করেও ক্রেতা বিক্রেতাগণ এর কোন সুফল পাচেছ না।
সরেজমিনে বদলগাছীর কোলা, গোবরচাঁপা হাটে গিয়ে দেখাযায় গরু, মহিষ প্রতি অতিরিক্ত ৮০-১০০ টাকা বেশী টোল আদায় করছে। অতিরিক্ত টোল নেওয়ার কথা খাজনা আদায়কারিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন ইজারা মালিক আমাদের গরু মহিষ প্রতি ৩৮০-৪০০শ টাকা করে নিতে বলেছেন। তাই ৩৮০-৪০০শ টাকার কমে আমরা কোন ছাড়পত্র দিতে পারিব না। উপজেলার আক্কেলপুর গ্রামের আহসান হাবীব, খামার আক্কেলপুরের মিরাজ, পাঁচ ঘরিয়ায়া গ্রামের জামসের, বকুল, কাশেম ও মহাদেবপুর উপজেলার ফারুক হোসেনসহ একাধীক গরু ক্রেতা যানায় অতিরিক্ত টোল না দিলে ছাড়পত্র বা রশিদ দিচ্ছে না।
ক্রেতারা আরও জানায়, ইজারদারদের লোকজন ছাড়পত্র ছাড়া গরু হাট থেকে বের করতেও দিবে না। তাই বাধ্য হয়ে ৮০-১০০ টাকা বেশী দিয়েই ছাড়পত্র নিতে হচ্ছে। উপজেলার প্রতিটি হাট বাজারে সরকারি টোল আদয়ের তালিকাও টাঙ্গানোর কথা থাকলেও কোন হাট বাজারে তা পাওয়া যায় নি।
সরকারি বিধি না মেনে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে বদলগাছী উপজেলার কোলা হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম ও তার প্রতিনিধি আসলাম এর সাথে কথা বললে তারা অতিরিক্ত টোল আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, এখানে স্কুল, মসজিদ, স্থানীয় লোকজনদেরকে টাকা দিতে হয় তাই কিছু অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। অপরদিকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে গোবরচাঁপা হাট ইজারদার খোকন এর প্রতিনিধির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান বাংলাদেশের কোন হাটেই টোল আদায় হচ্ছে না।
গোবরচাঁপা হাটের অতিরিক্ত টোল আদায় বিষয়ে মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সব জিনিসেরই হাটের ইজারদার অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। তারপরও ক্রেতা-বিক্রেতা দুই জনের কাছ থেকেই টোল আদায় করছে এটা নিয়ম নীতির পরিপন্থি।
অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুম আলী বেগ এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমি অভিযোগ পেয়েছি। খুব তারাতারি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধের জন্য উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এবিএন/হাফিজার রহমান/জসিম/এমসি