আজকের শিরোনাম :

সদরপুরে ভাঙনের কবলে চরমানাইর ইউনিয়ন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৫:০১

সদরপুর (ফরিদপুর), ১১ আগস্ট, এবিনিউজ : ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে চরমানাইর ইউনিয়নের চর বন্দর খোলা ফাজিল মাদ্রাসার অফিস কক্ষ ভবনের একাংশ নদীতে চলে গেছে। ভবনের অন্য অংশও অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় বিলীন হতে পারে পাড়ে থাকা ভবনের অংশটুকু। ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ নিয়ে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চর মানাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুব আলী।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এর লোকজন ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলতে গড়িমসি করতেছে। তাদের বালু নেই, লোকজন নেই। প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ জিও ব্যাগ ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলা হয়েছে। সপ্তাহের  যে পরিমান জিও ব্যাগ ফেলার কথা ছিলো তার কোনোটাই করে নাই। নিয়মিত জিও ব্যাগ ফেলা হয় নাই। নিয়মিত ফেললে এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতাম না।

জানা যায়, গতকাল শুক্রবার (১০ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আড়িয়াল নদের ভাঙনে পড়ে মাদ্রাসা ভবন। তীব্র স্রোত আর নদের গভীরতা বেশী থাকায় ভেঙ্গে পড়ে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে মাদ্রাসা ভবনের আরও দুটি বিল্ডি ও চর বন্দর খোলা নাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আরও জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে এই ইউনিয়নে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে এ পর্যন্ত  নদীগর্ভে এ পর্যন্ত বিলীন হয়ে গেছে ৬৫টি বসতবাড়ি। এছাড়াও ইউনিয়নের ৫শ’ বিঘা ফসলী জমি ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় দুই শতাধিক গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

ভাঙনে বিলীন হওয়া, কাদের মোল্যা(৪৮), সাইদুল কাজী(৪২), সামসু মোল্যা(৫০), রেজাউল(৪১), সুরুজ সেক(৪৬)সহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, তারা নদের ভাঙনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্তহয়েছেন। নদীতে তাদের ঘরবাড়ি এবং খাদ্য সামগ্রীও চলে গেছে। অসহায় হয়ে পড়ে তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কেউ আতœীয়ের বাড়ি আবার কেউ সরকারি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা তাদের বাড়ি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙন মুখে চরমভাবে হুমকিতে থাকা চরবন্দর খোলা মাদ্রাসা ও চর বন্দর খোলা নাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি প্রতিষ্ঠানের দরজা, জানালা, লোহার গ্রীল ভেঙে নেওয়া হচ্ছে।

চরবন্দর খোলা ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মাহফুজুল হাসান বলেন, গতকাল রাতে মাদ্রাসার অফিস ভবন নদে ভেঙ্গে পড়ে। রাতেই তিনি মাদ্রাসার আসেন।

তিনি আরও জানান, এর আগে মাদ্রাসার আরও দুটি টিনসেট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান অফিস কক্ষের বিল্ডিং এর একাংশে ভাঙন ধরেছে। যে কোনো মুহুর্তে পুরো ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন,পাঠদান তৃতীয় তলা ভবন নিয়ে শঙ্কিত রয়েছি। নদের ভাঙন আরও বেগমান হলে সেটিও বিলীন হতে পারে বলে জানিয়েছেন। ভাঙনে মাদ্রাসার অন্যান্য ভবন গুলো বিলীন হলে চরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে পড়বে শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ফাজিল পরীক্ষা চলমান রয়েছে।

চর বন্দর খোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নিজামদ্দিন আকন বলেন, ভাঙনে তার স্কুল একেবারেই ঝুকিতে রয়েছে। নদীর গর্ত স্কুলের সামনেই। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে ক্লাশসহ পরীক্ষার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।

ভাঙন প্রতিরোধের বিষয়ে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহামুদ উপজেলার ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগের ডাম্পিং কাজ চলছে। গত সপ্তাহ ধরে এ সকল এলাকায় নদী ভাঙন না থাকলেও হঠাৎ করে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৪হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মালেক মিয়া জানান, ভাঙনের আতঙ্কে থাকা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখার জন্যে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি নিলামে দেওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, মাদ্রাসাটির খবর প্রতিনিয়ত খবর নেওয়া হচ্ছে। নদের তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। ফাজিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্বদা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মাদ্রাসা প্রধানকে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আবু এহসান মিয়া জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিল থেকে সাহায্য করা হয়েছে।

এবিএন/সাব্বির হাসান/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ