আজকের শিরোনাম :

বুড়িমারীতে গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যায় ৩ মামলা, আটক ৫

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২০, ১৯:২৪

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে (৫০) পিটিয়ে ও পরে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় পাটগ্রাম থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

শনিবার (৩১ অক্টোবর) সকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা এবং পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। পাশাপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত (সিআইডি) সহ বিভিন্ন সংস্থা মাঠে নেমে তদন্ত শুরু করেছে।

শনিবার সকাল ১১টার দিকে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে ঘটনাস্থলসহ বুড়িমারী কেন্দ্রীয় বাজার মসজিদের ঈমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে বলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও রংপুর পুলিশের ডিআইজি।

এ সময় তারা সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের খুঁজে বের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকে একটি হত্যা মামলা, বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ ভাংচুর ও লুটপাটের একটি এবং পুলিশকে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে আরেটি মামলা হয়েছে। 

লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানান।

বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির নাম আবু ইউনুস মোহাম্মদ সহীদুন্নবী (৫০)। একই ঘটনায় গণপিটুনিতে আহত হন সুলতান জোবায়ের নামের একজন। তার ও শহীদুন্নবীর বাড়ি একই এলাকায়।

নিহত আবু ইউনুস মো. সহিদুন্নবী জুয়েলে বড় বোন হাসনা আক্তার লিপির সঙ্গে কথা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘটনার দিন ফজরের নামাজ পড়েই জুয়েল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর সকাল সাড়ে ৮টায় তার সঙ্গে শেষ কথা হয়। এ সময় জুয়েল তাকে জানান, জরুরী একটি কাজ শেষ করেই বাসায় ফিরবেন। এরপর অনেকবার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করা হলেও সে মোবাইল রিসিভ করেনি।

জুয়েলের শ্যালক মিলন হক তালুকদারের সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে পাটগ্রাম থানা কম্পাউন্ডে কথা হলে তিনি জানান, তার দুলাভাই একজন সৎ এবং ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

তিনি জানান, নিহত সহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রী পাড়ার আবু ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের গ্রন্থাগার বিভাগে ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি থেকে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। জুয়েলের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, নিহত জুয়েল দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (অব.) সাইকিয়াট্রি ডা. রফিকুল ইসলামের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

ঘটনা তদন্তে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেগম কামরুন্নাহার। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। সন্ধ্যায় তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা আলামত সংগ্রহ করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। ১ নভেম্বর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ