আজকের শিরোনাম :

লালমনিরহাটে যুবককে হত্যার পর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২০, ১১:১০

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে তুলে আবু ইউনুছ মো. শহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন বিক্ষুপ্ত জনতা। পরে ওই লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে বিক্ষুপ্ত জনতা।

বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের আগে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ঘটে এ ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি করেছে। এদিকে ঘটনার পর যুবকের মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়া হয়। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তাড়া করে সরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।

এ সময় বিক্ষুপ্ত জনতার হামলায় পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্তসহ ৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
নিহত আবু ইউনুছ মোঃ শহিদুন্নবী জুয়েলের বাড়ি রংপুর শহরের শালবন এলাকায়। জুয়েল রংপুর ক্যান্ট পবলিক স্কুলের সাবেক লাইব্রেরিয়ান বলে জানা গেছে। তার বাবার নাম আবদুল ওয়াজেদ মিয়া। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

তবে শহিদুন্নবী জুয়েলের প্রতিবেশীরা জানান, শহিদুন্নবী জুয়েল নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। তিনি একজন ধর্ম ভীরু মানুষ। তিনি কোরআন অবমাননা করছেন এটা বিশ্বাস হয় না। এ ঘটনার পিছনে অন্য কোনো ঘটনা থাকতে পারে।  

স্থানীয়রা জানান, দু’জন ব্যক্তি আসরের নামাজের সময় মসজিদে ঢোকে নামাজ আদায় করেন। এ সময় গুজব ছড়ানো হয় ওই দুই ব্যক্তি কোরআন অবমাননা করেন। এ সময় বিক্ষুপ্ত জনতা তাদের মারধর করেন। মসজিদে উপস্থিত এক ইউ-পি সদস্য ওই দুই ব্যক্তিকে মসজিদ থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন। পরে বিক্ষুপ্ত জনতা ইউনিয়ন পরিষদে ভাংচুর করে জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে বের করে নিয়ে গিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর বুড়িমারী-লালমনিরহাট সড়কের বাশ কল এলাকায় লাশ নিয়ে গিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে উল্লাস করতে থাকে। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও পুলিশকে তাড়া করে সরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযানে বিক্ষুপ্ত জনতাকে ছঙ্গভঙ্গ হয়ে যায়। অপর ব্যক্তি কোথায় আছেন তা এখনো জানা যায়নি।

খবর পেয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, আসরের নামাজ শেষে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দুই জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি আসেন। মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের একজন মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করেন।

এক পর্যায়ে মসজিদের সামনে থাকা ৫-৬ জন মুসল্লি মসজিদের প্রবেশ করে ওই ব্যক্তিকে এবং বারান্দায় থাকা অপর ব্যক্তিকে মারধর করেন।

খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষের ভেতরে ঢুকে তালা লাগিয়ে রক্ষার চেষ্টা করি। তবে মুহূর্তে শত শত লোকজন জড়ো হতে থাকে।

আমি ও স্থানীয় রফিকুল ইসলাম প্রধান নামে এক ব্যক্তি পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত, ইউএনও কামরুন নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলি।

এরই মধ্যে উত্তেজিত জনতা কারও কথা না শুনে পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে এক ব্যক্তিকে বাইরে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ নিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের বুড়িমারী প্রথম বাঁশকল এলাকায় কাঠখড়ি ও পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেখানে ৫-৬ হাজার উত্তেজিত মানুষ ছিল, কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আফিজ উদ্দিন বলেন, আমি আসরের নামাজ শেষ করে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পাই খাদেম জুবেদ আলীকে দুই জন অপরিচিত ব্যক্তি সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করে কথা বলছিল। এরপর তারা মসজিদের ভেতরে ঢুকে যায়। আমিও চলে যাই। পরে ঘটনার কথা এসে শুনেছি। কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানি না।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। একজনকে মেরে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কি কারণে এমন ঘটনা ঘটলো এবং এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা আমরা তদন্ত করছি।

এবিএন/আসাদুজ্জামান সাজু/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ