আজকের শিরোনাম :

কটিয়াদীতে এবারও বসেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২০, ১৬:২৫

ঢাকের বাজনা ছাড়া দুর্গাপূজা অপূর্ণ। মহাষষ্ঠী থেকে বির্সজন সবখানে চাই ঢাকের আওয়াজ। দুর্গোৎসব উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গতকাল বুধবার থেকে বসেছে ঢাকের হাট। করোনা সংক্রমণ এড়াতে এবার ঢাকের হাট হবে কিনা, একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল সে নিয়ে। কিন্তু সাবধানতার বিধি-নিষেধ মেনেই প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় এবছরও বসেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট।

রীতি আনুযায়ী,  উৎসবের আগের দিন অথাৎ পঞ্চমী ও ষষ্ঠীর দুই দিন এ হাট বসে। এ হাটে আসা ঢাকিরা আসেন মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, সিলেট, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। ঢাকের পাশাপাশি কাসি, সানাই, নানা জাতের বাঁশি, করতাল,খঞ্জরি বাদকেরাও সমবেত হন এই হাটে।

নামে ঢাকের হাট হলেও, এখানে ঢাক বা কোন বাদ্যযন্ত্র কেনাবেচা হয়না। বাদ্যযন্ত্র বাদকেরা অর্থের বিনিময়ে কেবল পূজা চলাকালীন আয়োজকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। কার চুক্তিমূল্য কত হবে, তা নির্ধারণ হয় ঢাকিদের দক্ষতার ওপর।

জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় তার রাজপ্রসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। কটিয়াদীর চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার রাজ প্রসাদ। একবার নবরঙ্গ রায় সেরা ঢাকিদের সন্ধানে ঢাকার বিক্রমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্তা পাঠান। সে সময় নৌপথে অসংখ্য ঢাকি সমবেত হয় কটিয়াদীতে। সেই থেকেই ঢাকের হাটের সূচনা।

বিক্রমপুরের ঢাকি শ্রীনাথ দাস বলেন, আমার দাদা-বাবারা এই হাটে আসতেন। আমিও এই ঢাকের হাটে ২১ বছর ধরে আসি। আমরা এত দূরদূরান্ত থেকে আসি কিন্তু আজও এখানে রাত্রিযাপন ও টয়লেটে ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। গত তিন বছর ধরে শুনছি আমাদের রাত্রি যাপনের জন্য বিশ্রামার্গার নিমার্ণ করা হচ্ছে।

সিলেট থেকে আসা সাত সদস্যের বাদক দলের প্রধান তারা মিয়া বলেন, গত ৪০ বছর ধরে আমরা এই হাটে ভালো বায়না চুক্তি পেয়েছি। তবে করোনার কারণে এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। বাজার মন্দা। তাই যেখানে মোটামুটি পোষাবে সেই পুজামন্ডপে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে মনস্থির করেছি।

গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার দীপক দেবনাথ বলেন, এই হাট থেকে প্রতিবছরই ঢাকিদের ভাড়ায় পূজার জন্য নিয়ে যায়। এবারও এসেছি। বাদ্যযন্ত্র ও বাদক পরখ করা হয়েছে। ঢাকিদের সঙ্গে দর দাম হচ্ছে।

ঢাকের হাটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকিদের সরব উপস্থিতি। বুধবার সকালের দিকে ঢাকির সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঢাকির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পত্তিবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত প্রায় একশত ঢাকি বিভিন্ন পূজামন্ডপে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, এখনও কয়েকশ ঢাকি চুক্তির জন্য অপেক্ষা করছে।

হাটের আয়োজকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, কটিয়াদী উপজেলার শাখার সভাপতি বেণী মাধব ঘোষ বলেন, এই হাটে প্রতি বছর ৪০০ থেকে ৫০০ ঢাকি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে। আমরা ঢাকি ও যারা বায়না করতে আসে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি।

হাটের সার্বিক নিরাপত্তায় সোচ্চার রয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। দুই দিন ধরে চলা এ হাট শেষ হচ্ছে ২২ অক্টোবর বিকালে।


এবিএন/ধ্রুব রঞ্জন দাস/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ