আজকের শিরোনাম :

ঢাবিতে থাকছে না গণরুম

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মে ২০২০, ২২:১৭

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম একটি আলোচিত বিষয়। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে বৈধ সিট দেয়া হয় না। আর সেই সুযোগ কাজে লাগায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন। নবীন শিক্ষার্থীদের গণরুমে সিট দেওয়ার বিনিমনে তারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য করে। অনেক সময় তুচ্ছ কারণে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতারা শিক্ষার্থীদের নির্যাতন-নীপিড়ন করে আসছে, যা প্রায় খবরের শিরোনাম হয়ে থাকে।

তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দ্ধিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হলও বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ সংকট কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কঠোর হতে যাচ্ছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে বহিরাগত ও অছাত্র দমনের পাশাপাশি গণরুম কালচার তুলে দিতে যাচ্ছে প্রশাসন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা অত্যাবশ্যক বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

গত মঙ্গলবার প্রভোস্ট কমিটির এক সভায় আবাসিক হলগুলো অছাত্র মুক্ত করে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা কথিত গণরুমের অবসান ঘটানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়, আবাসিক হলে অবৈধ/অছাত্র শিক্ষার্থীদের বের করা দেওয়া গেলে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা কথিত ‘গণরুমের’ অবসান ঘটবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রভোস্ট কমিটির এ সভায় ৫টি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে—

১) বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধুমাত্র বৈধ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলের নীতিমালার আলোকে হলে অবস্থান করবে। যাদের ছাত্রত্ব নেই তারা কোনক্রমেই হলে অবস্থান করতে পারবে না। তাদেরকে হল প্রশাসন কর্তৃক দেয়া সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট কক্ষ/সিট ছেড়ে দিতে হবে। তীব্র আবাসন সংকট নিরসনে এর বিকল্প নেই।

২) হলের কোন কক্ষের মেঝেতে কোন শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারবে না। প্রয়োজনে, যথাযথ নিয়মে, ডাবলিং করতে পারবে।

৩) হল প্রশাসন যে সকল কক্ষে খাট/বেড নাই ছুটিকালীন সময়ে সে সকল কক্ষে নিয়মমাফিক খাট/বেড সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিবেন।

৪) সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, এসব সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা কথিত ‘গণরুমের’ অবসান ঘটবে। তবে এই ‘গণরুমের’ অবসান ও ‘যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের হলে অবস্থান না করার’ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা অত্যাবশ্যক বলেও সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

৫) করোনার ছুটিতে হল প্রশাসন হলের সংস্কার ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন করবে।

এদিকে, কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদসহ (ডাকসু) বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, আবাসিক হল থেকে বহিরাগত ও অছাত্র দমনে প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।

আবাসিক হলগুলোকে বহিরাগত মুক্ত করতে ডাকসু সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে মেধার ভিত্তিতে আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা প্রভোস্ট মিটিংয়ের এই সিদ্বান্তকে আপাতত স্বাগত জানাতে পারছি না। কারণ, এর আগেও অনেকবার প্রশাসন এই দাবি তুলেছে কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

তিনি বলেন, আবাসিক হল থেকে সাবেক শিক্ষার্থী, বহিরাগত এবং অছাত্রদের বের করে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি ছাত্রলীগকে একমাত্র বাঁধা হিসেবে মনে করি। বাকি সকল ক্রিয়াশীল সংগঠন এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে আশা করি।

তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সময়ও সব ছাত্র সংগঠনই আবাসিক হলগুলোকে বহিরাগত মুক্ত করার প্রতিশ্রুত দিয়েছিল। তাই এখন প্রশাসন যদি এই ব্যাপারে সদিচ্ছা দেখায় তাহলে ডাকসুর পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি প্রশাসন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়। আর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রাশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে বলেও তিনি জানান।

প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য যেকোন সময় প্রস্তুত বলে জানান ‘সন্ত্রাস বিরোধী ছাত্র ঐক্য’র প্রধান সমন্বয়ক এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা অনেক আগে থেকে এ ধরনের কথা বলে আসছি এবং বিভিন্ন সময় এই ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করেছি। যদি প্রশাসন এ ধরনের উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত।

ইতিবাচক সাড়া দিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর যাবত আমরা ছাত্রলীগ দ্বারা ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত ছিলাম। আবাসিক হলের গণরুম প্রথা উঠিয়ে নেওয়া, বহিরাগত এবং যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদেরকে মুক্ত করার প্রশাসনের যে সিদ্ধান্ত তার আমরা সাধুবাদ জানাই। আগামীতে যেকোন ধরণের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজনে আমরা প্রশাসনের পাশে থাকতে বদ্ধপরিকর।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ