আজকের শিরোনাম :

অধ্যাপক ফারুককে হুমকির প্রতিবাদ জানালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ শিক্ষক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০১৯, ০০:২৮

বাজারে দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর উপাদান নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশের পর হুমকি দেয়া হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে। অবশ্য এই ‘হুমকির মধ্যেই’ দ্বিতীয় দফায় প্যাকেটজাত ও খোলা দুধ নিয়ে গবেষণা করে প্রতিবেদন তিনি। আর এ হুমকি-ধমকি ও অন্যায়ভাবে চাপ প্রয়োগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ শিক্ষক।

এক সংবাদ বিবৃতিতে সোমবার (১৫ জুলাই) এই প্রতিবাদ জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের ‘সদ্য-সাবেক’ পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণা কার্যক্রমকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি এবং অন্যায়ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অধ্যাপক ফারুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং গবেষক।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অনুদানের সাহায্যে অধ্যাপক ফারুক বিভিন্ন কোম্পানির বাজারজাতকৃত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার দাবি করেছেন। জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক এই ঘটনাটি প্রচারে আসা মাত্রই সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এবং সরকারি আমলাদের কেউ কেউ অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাষায় অধ্যাপক ফারুককে আক্রমণ করছেন এবং চাপ প্রয়োগ করছেন বলে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্নসূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। এরইমধ্যে ফার্মেসি অনুষদভুক্ত চারটি বিভাগের চেয়ারম্যান এই গবেষণার দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এই অবস্থায় অধ্যাপক ফারুকের মতো আমরাও বিপন্ন বোধ করছি।

বিবৃতিতে ৬৬ শিক্ষক বলেন, অধ্যাপক ফারুক দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় আবারো দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় পরীক্ষার এই ফলটি তিনি প্রকাশ করেছেন। গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে তিনি নীতিনৈতিকতাবিরোধী কোন কাজ তো করেননি, বরং তার দায়িত্ব পালন করেছেন। এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, বিএসটিআই দুধের মান নির্ণয়ে ১৭ বছর আগে যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছিলো তা দুধের মান নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নির্ণয়ের মতো কোনো পদ্ধতি বিএসটিআই-এর নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো গবেষণার মান ও ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন থাকলে যথার্থ উপায় হচ্ছে বৈজ্ঞানিকভাবেই সেই গবেষণার ফলকে ভুল প্রমাণ করতে আরেকটি গবেষণা ও উপযুক্ত পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। অধ্যাপক ফারুকের গবেষণার ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে সরকারি কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরো গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুধের মান নিয়ে জনমনে সন্দেহের অবসান ঘটাতে পারতেন। তা না করে অধ্যাপক ফারুককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে জনপ্রতিনিধি, সরকারি আমলা ও বিভিন্ন কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যে আচরণ করছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার পরিবেশের জন্য এক বিরাট হুমকি।

‘এরকম একটি পরিস্থিতিতে ১৪ জুলাই হাইকোর্ট ১৪টি কোম্পানির প্রস্তুতকৃত দুধের নমুনা পৃথক চারটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাই। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কেও সমাধানসূত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমেই খুঁজতে হবে, এটাই সভ্য দেশের রীতি। তা না করে, গবেষণার ফল প্রকাশকে নিয়ে যে অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো ঘটানো হলো তা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো আত্মমর্যাদাবান শিক্ষক ও গবেষকদের সত্যিকার অর্থেই অসম্মানিত ও বিপন্ন করেছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলের আক্রমণাত্মক বক্তব্য ও আচরণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত এসব বিষয়ে আরও গবেষণাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আমরা সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক বাজারে প্রাপ্ত প্রস্তুতকৃত দুধের নমুনা যথাযথভাবে পরীক্ষা করে জনমনে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তা নিরসনকল্পে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানাই।

বিবৃতি দানকারী শিক্ষকরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক ফাহমিদুল হক; ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ‍মুজিবুর রহমান, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনাসীর কামাল, আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অর্পিতা শামস মিজান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা খানম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিম হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশান ফরিদী, পদার্থ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক হাসিবুল হাসান চৌধুরী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, দর্শক বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ ভূঁইয়া, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক আইনুন নাহার; প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিমেল বরকত, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাহিদ সুমন, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান শরীফ, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পারভীন জলি, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

বিবৃতি দানকারী অন্য শিক্ষকরা হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বার হাসান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কাজী শেখ ফরিদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক কাজী মসিউর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার, সহকারী অধ্যাপত সুদীপ্ত শর্মা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আতাউর খান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জাভেদ কায়সার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক কাজী অর্ক রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদাফ নূর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইটিই বিভাগের শিক্ষক আরিফুজ্জামান রাজীব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস।

এছাড়া বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৌম্য সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক গৌতম রায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক বিজ্ঞান ও ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহুল ভট্টাচার্য্য, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের হিয়া ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন খন্দকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জপতোষ মণ্ডল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামস আরা খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুকান্ত বিশ্বাস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসমত হোসেন প্রমুখ ।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ