আজকের শিরোনাম :

দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ‘গাকসু’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:৫০

গণ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ৩৬ একরের এ সবুজ ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি নির্বাচিত অরাজনৈতিক ছাত্রসংসদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পর পর এ ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের  ভোটে ছাত্র প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন।

সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন এবং নারী নেতৃত্ব নিয়ে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের ভিপি মোঃ জুয়েল রানা ও বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন বিশ্ববিদ্যালয ছাত্রসংসদের দ্বিতীয় নারী  কোষাধ্যক্ষ , গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের কোষাধ্যক্ষ খাদিজা আক্তার সেতু।

"যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে সকল  বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন জরুরি"

মোঃ জুয়েল রানা, ভিপি, গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (গাকসু)

প্রতিভাবান ও যোগ্য-নেতৃত্ব তৈরি, মুক্তবুদ্ধিচর্চা, জাতির ক্রান্তিলগ্নে অগ্রণী ভূমিকা পালন ও জাতি গঠনমূলক কাজে ছাত্র সংসদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্রসংসদের নেতারা বায়ান্নোর ভাষাআন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ জাতির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন।

গণতন্ত্রের বিকাশে মুক্তবুদ্ধিচর্চার কোনো বিকল্প নেই। অথচ প্রায় সিকিশতাব্দি ধরে মুক্তবুদ্ধিচর্চার সূতিকাগার চাকসু, জাকসু, রাকসু ও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, আবাসিক হল ও বিভাগগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না।  পুঁথিগত জ্ঞানার্জন আর সনদপ্রাপ্তিই কেবল উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য হতে পারে না।

পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জনের জন্য আরো অনেককিছু জানা অত্যাবশ্যক। উচ্চশিক্ষার বিষয়টি আরো ব্যাপক। পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও মানবিক গুণাবলীর বিকাশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসমাজের এসব অনুসঙ্গগুলো পূরণ করতে প্রয়োজন ছাত্র সংসদ। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিদাওয়া তুলে ধরার প্লাটফরম হচ্ছে এ ছাত্র সংসদ। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত নানামুখি সমস্যার মুখোমুখি হয়। অপর্যাপ্ত পরিবহন, লাইব্রেরিতে বইসঙ্কট, হলে সীট না পাওয়া, নিম্নমানের খাবার ইত্যাদি সমস্যা তাদের নিত্যসঙ্গী।

অথচ ছাত্র সংসদ না থাকায় এসব সমস্যা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার কোনো মাধ্যম নেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো প্লাটফরমে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। ফলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত দু’যুগের বেশি সময় ধরে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে।

 সর্বস্তরে বিশেষ করে সরকার ও রাজনৈতিক দল পরিচালনায় যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্বের যে চরম সঙ্কট চলছে – তা দূর হতো, অতীতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি সর্বসাধারণের যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল- সেই প্রবণতা ফের জেগে উঠতো।

দেশের ‘দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ’ ছাত্র সংসদ সচল না হওয়ায়  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি নেতৃত্বহীন। ইতিমধ্যে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আমি মনে করি যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে ডাকসুর মত সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

"নারী নেতৃত্ব এগিয়ে যাক"

খাদিজা আক্তার সেতু, কোষাধ্যক্ষ, গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (গাকসু)

বাংলাদেশের নারীরা আজ এগিয়ে যাচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভেতরে চলমান নির্যাতন, অবদমন, বর্বরতা-নির্মমতা নারীকে পুরোপুরি দমিয়ে রাখতে পারেনি। নারীরা জেগে উঠেছে তাদের মতোই, আপন শক্তিতে। অবদমন প্রক্রিয়ার মধ্য থেকেও বাংলাদেশে নারীদের সাফল্য এখন আকাশছোঁয়া ! 

কারণ বিশ্বে এই মুহূর্তে আমরাই সবচেয়ে বেশি নারীর ক্ষমতায়নে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি! আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন সফল নারী, যিনি একাধারে একজন সফল সরকারপ্রধান এবং সফল মা! সফল নেতৃত্বের সব গুণ অর্জন করে আজ তিনি বিশ্বনেতাদের কাতারে। বিরোধী দলের নেতা নারী, আমাদের স্পিকার নারী, সংসদ উপনেতা নারী। আমাদের মন্ত্রিসভায় আছেন অনেক নারী মন্ত্রী, যা অন্যান্য দেশের জন্য এখনও অকল্পনীয়! শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে এখন সচিব পদে নারী, জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে নারী, বিচারপতির আসনে নারী, জজ-ব্যারিস্টার হিসেবে নারীরা জায়গা করে নিচ্ছেন। সামরিক বাহিনীতে নারীদের সাফল্য দেখার মতো, পুলিশ সদস্য হিসেবে নারীদের সাফল্য অনেক বেশি।

কেননা শোনা যায়, নারী পুলিশ সদস্যরা পুরুষ পুলিশ সদস্যের তুলনায় অনেক সৎ হয়। গণমাধ্যম, শিক্ষকতা, এনজিওতে নারীর সাফল্য ঈর্ষণীয় পর্যায়ের। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় সর্বোচ্চ ভালো ফলগুলোও আজ মেয়েদের মুঠোয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে আমাদের লাখো নারী গার্মেন্ট কর্মী! বাংলাদেশের মেয়েরা আজ চষে বেড়াচ্ছে হিমালয়ের চূড়া; পাইলট হয়ে পৃথিবীর আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে! শিলা-সীমান্তরাই বাংলাদেশের পতাকা বিদেশের মাটিতে উড়িয়ে দেয় সগৌরবে। বাংলাদেশের নারীরা এভাবে এগিয়ে যাক দুর্বার গতিতে। বিশ্ব জানুক আমাদের আকাশ ছোঁয়ার গল্প।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের আকাশ ছোঁয়ার গল্প শুনতে অনেকেরই ভালো লাগবে না।

কিন্তু আমাদের শুনতে ও শোনাতে হবে। কাজটা আমাদের নিজেরই করতে হবে। শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। যেসব মা আজ অবধি ঘরের কাজ করেই জীবন পার করে দিলেন; যেসব বাবা ভাবেনথ 'আমার মেয়েও যদি এমনভাবে বিশ্বজয় করত, তাদের আজ শপথ নেওয়ার দিন। বাবারা, যারা এতদিন মেয়েকে দমিয়ে রেখেছেন, আজ সময় এসেছে মেয়েকে এগিয়ে নেওয়ার। আর নীচুতা, ভীরুতা, অবদমন নয়। নিজের মেয়েকে আকাশ ছোঁয়ার গল্প বলার সময় এসেছে। স্বপ্ন দেখাতে হবে তাদের। তৈরি হতে হবে নতুন এই বাংলাদেশের জন্য, বিশ্বজয়ের জন্য। কেননা, সময় এসেছে। মেয়েদের হাতেই আসছে বাংলাদেশের বিজয় পতাকা এবং নারী নেতৃত্ব এগিয়ে যাক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।


এবিএন/সারোয়ার জাহান সাগর/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ