আজকের শিরোনাম :

আন্দোলনে উত্তাল ইবি : ২২ শিক্ষার্থী আটক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:৪০ | আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:৩৮

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। জরুরি অবস্থা উপক্ষো করে বর্ধিত বেতন ফি কমানো এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে পৃথক পৃথক আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে বুধবার ভোরে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভূক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

আটককৃতদের বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ বলেন, ‘২২ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তাদরকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

জানা যায়, আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকেই প্রশাসন ভবনের দুই গেইটে অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনের গেইটে ‘অনতিবিলম্বে আকটকৃত সকল শিক্ষার্থীকে নি:শর্তে মুক্তি, সকল বৈষম্য দূর করে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির মান নিশ্চিতসহ তিন দফা দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন শুরু করেছে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে ভবনের পেছনের গেইটে অবস্থান নিয়েছে বেতন ফি কমানোর আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন নিয়ন্ত্রনে আনতে ক্যাম্পাসে জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকাল থেকে মাইকিং করে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের বহনকারী পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় দশটি বিভাগের পূর্বনিধারিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীর দাবি:
ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে গতকাল (মঙ্গলবার) থেকেই ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভূক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছিল। অনশনে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার পরও প্রশাসন এবং অনুষদের পক্ষ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে দুপুর ২টার দিকে ডিন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে অফিসের ভেতরে আটকা পড়েন ডিন অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল মমিন ও পিওন বাদল।

পরে রাত ৯ টার দিকে অবরুদ্ধ দুই কর্মচারীদেরকে উদ্ধার করতে আসেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মমতাজুল ইসলাম ও ছাত্র-উপদেষ্টা ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ। তারা ভবনের ভিতরে ঢুকলে তাদেরকেও অবরুদ্ধ করে আন্দোলনকারীরা।

পরে ডিন ও ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করতে রাত ১ টার দিকে সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান ও প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. আনিছুর রহমান ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান-উল হক আম্বিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর রাত ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় আন্দোলকারীদের সাথে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হন তারা।

এর আগে রাত সাড়ে ১১ টা থেকেই ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পরে সাড়ে রাত ৪টার দিকে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত অতিরিক্ত ডিএসবি মোস্তাক, ডিএসবি মোস্তাফিজুর রহমান, মিরপুর জোনের এএসপি ফারজানা ইসলাম এবং ইবি থানার ওসি রতন শেখের নেতৃত্বে ক্লবসিবল গেটের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

ভিতরে ঢুকে ডিন, ছাত্র উপদেষ্ঠা ও দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা করিডোরে অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেট দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে এবং শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ বাহিনী ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করে অন্যদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বিশ্ববিদ্যারয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী এ বিষয়ে বলেন, ‘গতকাল একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পিছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ দুই জেলার প্রশাসন এবং গোয়েন্দাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে।’

বেতন ফি কমানোর আন্দোলন:
গতকাল মঙ্গলবার থেকে বর্ধিত বেতন ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন করছে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এ উপলক্ষে তারা ক্যাম্পাসে কøাস বর্জন, মিছিল, প্রশাসন ভবন অবরোধ, মেইন গেইটে তালা ঝুলানো ও অনশন কর্মসূচি পালন করে। দিনব্যাপি তাদের এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, সাবেক প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির সভাপতি দফায় দফায় সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং তাদের লিখিত আশ্বাসের ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এবং বুধবার (আজ) বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। তবে তাদের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে আজ (বুধাবার) বেলা ১২টায় সিন্ধান্ত জানতে প্রশাসন ভবনের সামনে যায় শিক্ষার্থীরা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে প্রশাসনের কোন প্রতিনিধির মন্তব্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পুণরায় প্রধান ফটক অবরোধ করেছে তারা।

শিক্ষার্থীরা জানায়, স্যারদের প্রতি সম্মান রেখে আমরা গতকাল আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। তারা আমাদের আজ (বুধবার) ১২টায় সময় দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা কোন সাড়া পায়নি। ফলে আমরা পুণরায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি ও অন্যান্য ফি বৃদ্ধি করে প্রশাসন। এতে কলা ও সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগ সমূহের জন্য ভর্তি ও অন্যান্য ফি ১৪০১৫ টাকা, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত বিভাগ সমূহের জন্য ১৪৬১৫ টাকা, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগ সমূহের জন্য ১৫৫১৫ টাকা করা হয়। যা পূর্বের ভর্তি ফি ও অন্যান্য ফির তুলনায় তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভর্তি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে পূর্বের ১৯ টি খাত থেকে ৩৬ টি করা হয়েছে।

 

এবিএন/অনি আতিকুর রহমান/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ