আজকের শিরোনাম :

ইচ্ছা থাকলেই সফল হওয়া সম্ভব : রাবির ছাত্র উপদেষ্টা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ২০:১৯

‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) বর্তমান ছাত্র উপদেষ্টা ‘রসায়ন’ বিভাগের অধ্যাপক ড. লায়লা আরজুমান বানু । ১৯৯৫ সালে ইতিহাস গড়ে নারী হিসেবে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথমবারের মত প্রথম স্থান অধিকার করেন। বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৪০ বছরে তিনিই প্রথম নারী শিক্ষক। তার সফলতার গল্প জানাচ্ছেন মো.উমর ফারুক। ছবি তুলেছেন মুজাহিদ শাহিন

অধ্যাপক লায়লা বানু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৯৭ সালে। নিয়োগের মাধ্যমে একটি ইতিহাসও সৃষ্টি করেছেন ।কারণ ৪০ বছর পরে প্রথম নারী শিক্ষক। এই পেশার মাধ্যমে দেশের জন্য, মানুষের জন্য সেবা করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সেটা হয়েছে ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম আসল। ১৯৯৬ সালে প্রথম নারী শিক্ষিকা হিসেবে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে প্রফেসর হিসেবে পদন্নতি পান তিনি। ২০১৮ সালে ১ অক্টোবর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় দ্বিতীয় নারী ছাত্র-উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করে দায়িত্ব পালন করছেন।

সাধারণ জীবনকে অসাধারণ কিছু সফলতার উপহার দিয়েছেন  তিনি। মা জাহানারা বেগম আর স্কুল শিক্ষক বাবা তার আদর্শ। লেখাপড়ার হাতেখড়ি বাবার হাতেই।

‘অধ্যাপক লায়লা বানু শৈশব কাটান নীলফামারীর ডোমার থানার অন্তর্গত বামুনিয়া গ্রামে। যেখানে শিক্ষক বাবার ঘর আলোকিত করে পহেলা ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের  গোমনাথ হাইস্কুল থেকে ১৯৮৫ সালে ডাবল ফার্স্ট ডিভিশনে থানার মধ্যে প্রথম স্থানসহ এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর পর চলে আসেন রংপুর শহরে। সেখানকার কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৮৭ সালেও ডাবল ফার্স্ট ডিভিশন নিয়ে এইচএসসি পাশ করেন।

অনেক ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মেডিকেলে পড়াশোনা করে ডাক্তার হবেন কিন্তুসেটা সম্ভব হয়নি । পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে । পড়াশোনাকে সবসময় সিরিয়াস ভাবে দেখতেন। যেহেতু বিভগে ভাল রেজান্ট করতে পারলে শিক্ষক হবার সম্ভাবনা ছিল সেহেতু পড়াশোনকে অধিক গুরুত্ব দিতেন। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম গ্রেডসহ ১৯৯৪ সালে বিভাগ থেকে অনার্স ও ১৯৯৫ সালে মার্স্টাস সমাপ্ত করেন তিনি

সফলতার পেছনে কারণ জানতে তিনি বলেন,শত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে সফল হকে পেরেছি আর এ সাহসটা পেয়েছি আমার আব্বার কাছ থেকে। আব্বা সবসময় বলতেন যে, ছেলে-মেয়ে কোন ব্যাপার না, পড়াশোনা করলে সবাই সমান। এ আর্দশকে সামনে রেখে সামনে এগিয়ে গিয়েছি অবশেষে সফলতার মুখ দেখতে পেরেছি।

বিশ^বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সুযোগ সুবিধার আবদারগুলো জানাতে প্রতিদিনই শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ অনেকেই হাজির হন তার কাছে। সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের সুখ- দু:খ ভাগাভাগি নিয়ে। আর এটিই যেনও তার ভাল লাগার জায়গা।

ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের সুবিধা -অসুবিধা সংশ্লিষ্ট কাজে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেত তাকে। এর আগেও সুযোগ হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে কাজ করার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজেকে সবসময়ই আমি শিক্ষার্থীদের একজন অভিভাবক হিসেবে মনে করি। সে যেই লেভেলের হোক বা যেখানেই হোক তাদের উপকারে যদি আসতে পারি,  কোন একটা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারি তাহলে নিজের সফলতা মনে করি।

আমি যখনই এখানে বসেছি। তখনই মনে হয়েছে যে, আমি ছাত্রদের কল্যাণেই নিয়োজিত থাকবো। যার ফলে, ছ্ত্রারা যখনই আসে ওরা হয়ত একটা উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। আমার একটু সময় থাকলে  শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করি। ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে সফলতা বিষয় হচ্ছে, ছেলেদেরকে এক্সটা কারিকুলারে যেতে উৎসাহী করতে পেরেছি। এটা আমার ভালো লাগে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে। এরপর কর্মক্ষেত্রে তারা নেতৃত্বে সক্ষমতা অর্জন করবে। সব জায়গায় আমাদের ছাত্ররা যাতে সুনামের সাথে তাদের কর্মজীবনটা চালিয়ে যেতে পারে এটাই আমার কাছে মনে হচ্ছে সফলতা।

অন্যদিকে সীমাবদ্ধতার জায়গার কথা জানিয়ে ড. লায়লা বলেন, অনেক দরিদ্র ছেলে-মেয়ে আছে। কারও বাবা কৃষক, রিক্সা চালক, আবার কারও বাবা ফেরিওয়ালা। এদের কষ্টের কথা শুনলে আমার ভেতরটা কষ্টে দুমড়ে- মুচড়ে যায়। এদের জন্য কিছু করলে আমার ভাল্ লাগতো। তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করি।

ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইন্ডিয়ায় দুইটা প্রোগ্রাামে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চেষ্টা করছি। তাদের যেতে আনুসঙ্গিক খরচের ব্যবস্থা করেছি। আমি চাই, ছেলেমেয়েরা শুধু অর্থকষ্ট আসুক সেটা না। এটা আমার পরিকল্পনার মধ্যে আছে শিক্ষার্থীরা দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রোগামে অংশ নিয়ে এক্সটা কারিকুলারসহ তাদের প্রতিভা বিকশিত হোক।

নারীদের উদ্দেশ্য ছাত্র-উপদেষ্টা ড. বানু বলেন, প্রথমত সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। কর্মক্ষেত্রে যতটুকু দায়িত্ব থাকবে ততটুকু পুরোপুরি সততার সাথে পালন করার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়েদের অনেক প্রতিকূলতা আছে। সংসার ও কর্মজীবন কোনটায় ফেলতে পারে না। কারণ নারীরা সমাজে একজন মা ও একজন কর্মজীবী।

এই দুইটা সামলাতে গিয়ে একটু হিমশিম খেতে হয়। এই জায়গাতে মেয়েরা একটু সহযোগিতা পেলে এটা বড় একটা সহায়ক হিসেবে কাজ করে। জীবন সাথী একে অপরের পরিপূরক। মেয়েটাকে বুঝতে হবে স্বামীকে বুঝালে বুঝবে। তবে মেয়েদের আগে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা সমাজে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা একটু পিছিয়ে। সফলতা পেতে হলে মেয়েদের একটু ছাড় দিতে হবে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের উদ্দেশ্য ছাত্র উপদেষ্ঠা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত নারী আছে তাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রোগাম করা উচিৎ। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা দরকার। তাহলে নারীদের পথ সহজ হবে। একটা পরিবারে যদি মেয়ে চাকরিজীবী হয় তাহলে ওই সংসারটা সুখি হয়। নারীরা যত এগিয়ে আসবে বা কর্মজীবী হবে সেই রাষ্ট্রটা বেশি উন্নয়ন হবে মনে করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। দেশের প্রতি ভালবাসা তৈরি করতে হবে। তাহলে দায়বদ্ধতা বাড়বে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ^বিদ্যালয়ে অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কো-অরডিনেশন  কেমিস্ট্রি নিয়ে মেটাল ট্রানজিশনের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন। তার গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘স্টাডিজ অন ট্রানজিশন মেটাল কমপ্লেক্সেস উইথ এমিনিস এন্ড শিফ বেজ।’

এদিকে শিক্ষকতা জীবন শেষে ড. লায়লা রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান বলে জানিয়েছেন।  তিনি বলেন, রাজনীতিতে জনগণের সেবা করার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে যাওয়ার পরে জনসেবার উদ্দেশ্য রাজনীতি করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

অধ্যাপক ড. লায়লা আরজুমান বানু ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন বিশ^বিদ্যালয় মহিলা ক্লাবের সহ-সভাপতি, মহিলা পরিষদ রাবি শাখার সদস্য হিসেবেও। তার রসায়ন বিষয়ে প্রায় ১২ গবেষণা রয়েছে যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত।


এবিএন/উমর ফারুক/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ