আজকের শিরোনাম :

যে কারণে শোভন হেরেছেন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:২৮ | আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন অপ্রত্যাশিতভাবে্ হেরে গেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুরের কাছে। নুর পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২ ভোট-আর শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট।

২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি ২৩ পদেই ছাত্রলীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ছাত্রলীগের এ বিশাল বিজয়ের মধ্যেও সংগঠনটির শীর্ষনেতা শোভন কেন হারলেন, সেটি নিয়ে চলছে এখন নানারকম পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ক্যাম্পাসের তারকা বনে যাওয়া নুরুল হক নুরের ব্যক্তি জনপ্রিয়তা এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই বিজয়ী হতে পারেননি শোভন।

ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সঙ্গে আলাপকালে বলেন, যে হলে ছাত্রলীগের প্যানেলের সবাই পাস করেছে, জিএস ও এজিএস পদে ছাত্রলীগের গোলাম রব্বানী ও সাদ্দাম হোসাইন জিতেছেন একই হলে শোভন কী করে নুরুর চেয়ে কম ভোট পায়! তার মানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই শোভনকে ভোট দেননি।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেছেন, গত কয়েক বছর ধরে ছাত্রলীগের অভ্যান্তরে যে অপ্রকাশিত সিন্ডিকেটের কথা শোনা যাচ্ছিল, এর আধিপাত্য এখনো আছে। গত সম্মেলনে ওই সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলার যে আওয়াজ ওঠেছিল তা মূলত ভাঙা সম্ভব হয়নি। ছাত্রলীগে সিন্ডিকেটের আধিপত্যের কারণেই মূলত শোভন হেরে গেছে। এবারের কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগে আধিপত্য বিস্তার করে আসা সংগঠনের সাবেক শীর্ষনেতাদের সিন্ডিকেট তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।

উত্তরবঙ্গের ছেলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সিন্ডিকেটের বাইরে থেকে এসে ছাত্রলীগের সভাপতি হন। যে কারণে শোভনকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেননি ছাত্রলীগের সাবেক ওই শীর্ষনেতারা। এবারের ডাকসু নির্বাচনে তাদের অনুসারীদের দিয়ে শোভনকে হারানোর সব চেষ্টা করেছেন বলেও দাবি করছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক প্রভাবশালী নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হলের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওই হলে ছাত্রলীগের প্যানেলের জিএস প্রার্থী পেয়েছে ১৬০০ ভোট, এজিএস প্রার্থী পায় ১৫০০ ভোট। কিন্তু ভিপি প্রার্থী পেয়েছে মাত্র ৫০০ ভোট। এ থেকে বোঝা যায়, ছাত্রলীগের সবার ভোট শোভন পাননি। ওই নেতা আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ বেশ কয়েকটি হলে হল সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল জিতেছে ছাত্রলীগের। অথচ খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওই সব হলে শোভনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে নুর।

গতবছর সংগঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় নুরুল হক নুর ক্যাম্পাসে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পটুয়াখালী বাড়ি হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর বরিশালের ছেলেমেয়েদের ভোটও পেয়েছেন নুর। এ ছাড়া ভোটের দিন রোকেয়া হলে নুরের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে- কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরও নুরের ভোটপ্রাপ্তির হার বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ধারণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই।

ডাকসু নির্বাচনকে কিভাবে দেখছেন, এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচনে ছাত্রলীগের বিশাল বিজয় এসেছে। এ বিজয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। এ জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানাতে চাই। তাদের রায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। তবে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কাজে জড়িত থাকায় আমার এক ধরনের উপলব্ধি হয়েছে, ভিপি পদটি হারাবার কারণ হিসেবে আমি দেখি, এ পদটির ব্যাপারে ছাত্রলীগের সম্মিলিত প্রচেষ্টার অভাব ছিল।

আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ভিপি পদে পরাজয়ের কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হবে। এর ভিত্তিতে একটি মূল্যায়ন রিপোর্ট তৈরি করা হবে। সেই রিপোর্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ