আজকের শিরোনাম :

ডাকসুর ভিপি কোটা আন্দোলনের নূর, জিএস রাব্বানী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০১৯, ০৮:২৩ | আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৯, ১১:০৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দিনভর ছিল নাটকীয়তা। অনিয়মের নানা অভিযোগ এবং অধিকাংশ প্যানেলের প্রার্থীদের বর্জনের মধ্যে ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্রলীগ অন্য প্রায় সব পদে জয়ী হলেও ভিপি পদটি জিতে নিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা নূরুল হক নূর।

এর মধ্য দিয়ে ২৫তম ভিপি হিসেবে ডাকসুর গৌরবমাখা ইতিহাসের অংশ হলেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। আর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে বিজয়ী হয়েছেন সাদ্দাম হোসেন।

সোমবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টা ২৪ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।

ঘোষিত ফলাফলে ভিপি পদে নূর পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট।

নুরুল হক নূর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। ২০১৩–১৪ শিক্ষাবর্ষে এ শিক্ষার্থী হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তিনি পটুয়াখালীতে জন্ম গ্রহণ করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী তিনি আলোচনায় আসেন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এ যুগ্ম-আহ্বায়ক আন্দোলন করার কারণে ছাত্রলীগের হাতে ব্যাপক মারধরের শিকার হন।

এবারই প্রথম সরকারি দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) অধিকাংশ আসনে বিজয়ী হতে দেখা গেলেও ভিপি পদের ক্ষেত্রে আগের ধারাবাহিকতাই থাকল।

তবে স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেলের বাইরে থেকে কাউকে ডাকসুর ভিপি পদে দেখার সুযোগ ঘটছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ব্যানারে জোরাল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে পরিচিত পান এই ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক নূর।

তারপর হামলা, মামলা, নির্যাতনের সয়ে ইংরেজি বিভাগের এই ছাত্র এবার শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে যাচ্ছেন ডাকসুতে।

সোমবার ভোটগ্রহণের সময় রোকেয়া হলে নূরের উপর ছাত্রলীগ হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। দুপুরের ওই ঘটনায় আহত হন এই ভিপি প্রার্থী; যদিও একে ‘নাটক’ বলেছেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

জিএস পদে ছাত্রলীগের রাব্বানীই ১০ হাজার ৪৮৪ ভোট হয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাশেদ খান পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৩ ভোট।

এজিএস পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ১৫ হাজার ৩০১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ফারুক হোসেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৯৬ ভোট।

রাত সাড়ে ৩টার পর সিনেট ভবনে উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান যখন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করছিলেন, তখন সেখানে ছাত্রলীগের ভিপিপ্রার্থী শোভনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ভিপি পদে নূরের নাম বিজয়ী হিসেবে ঘোষণার পর থেকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে ছাত্রলীগের কর্মীরা। তারা ভিপি পদের ফল না মানার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ব্যালট ছিনতাইকারীয়ের জন্য নূরকে দায়ী করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ২৫টি পদের একটি বাদে অন্যগুলোতে ছাত্রলীগের প্যানেলের (সম্মিলিত শিক্ষার্থী পরিষদ) প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন।

শুধু সমাজসেবা সম্পাদক পদে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আখতার হোসেন জয়ী হয়েছেন।

ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে বিজয়ী অন্যরা

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক- সাদ বিন কাদের

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক- আরিফ ইবনে আলী

কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক- বিএম লিপি আক্তার

আন্তর্জাতিক সম্পাদক- শাহরিমা তানজিনা অর্নি

সাহিত্য সম্পাদক- মাজহারুল কবির শয়ন

সাংস্কৃতিক সম্পাদক- শামস ই নোমান

ক্রীড়া সম্পাদক- শাকিল আহমেদ তানভীর

ছাত্র পরিবহন সম্পাদক- রাকিব হাওলাদার

সদস্য: চিবল সাংমা, নজরুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, ইশাত কাশফিয়া ইরা, নিপু ইসলাম তন্বী, হাইদার মোহাম্মদ জিতু, তিলোত্তমা শিকদার, জুলফিকার আলম রাসেল ও মাহমুদুল হাসান

এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে অধিকাংশ প্রার্থীর সঙ্গে নূরুল হক নূরের প্যানেলও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল।

ছাত্রদল, বাম জোট ও স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলেন। আগে থেকে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছিল বলে তাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ভোটারদের বাধা দেওয়া অভিযোগও তুলেছেন।

এই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে উপাচার্য ভবন ও কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভের পর ভোট বর্জনকারীদের পক্ষে মঙ্গলবার বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বাম জোটের ভিপি প্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী।

বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুল ধরে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন নিজস্ব উদ্যোগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী আটজন শিক্ষকও।

অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেছেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং তাদের ঠেকাতে ছাত্রদলসহ অন্য প্যানেলগুলো পরিকল্পিতভাবে ‘নাটক’ সাজিয়েছে।

নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুসারে ডাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে ২২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৩ জন। এছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন। এর বাইরে ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ