আজকের শিরোনাম :

জবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটুক্তি, শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৪৫

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. দোলন রায়ের শাস্তি দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।  আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের চেতনাধারী শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের ব্যানারে এক মানববন্ধন থেকে তারা এ দাবি জানান।  এসময় তারা এ শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবাঞ্চিত করারও দাবি রাখেন।

মানববন্ধনে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জবি সংসদের সভাপতি নাঈদুর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড.এস এম আনোয়ারা বেগম আমাদের গর্ব।  বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান কারী এমন শিক্ষককে জগন্নাথ থেকে অবাঞ্চিত করা উচিত।  অনতিবিলম্বে এমন শিক্ষক নামের কলঙ্কদের শাস্তির আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

জানা যায়, আওয়ামী পন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল ভেঙ্গে হয়েছে দুভাগ, আচরণ যেন কেউ বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদাদল আরা যেন কেউ নীলদল। তবে উভয় পক্ষেরই দাবি যে দুটাই নীলদল।  গত ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্যানেল দেয় দুটিই নীলদল বলে। যেখানে নির্বাচনে ছিলনা সাদা দল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রবীণ শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, নীলদলের এমন গ্রুপিং এ জামাত-বিএনপির আদর্শের শিক্ষকদের খুঁজে পাওয়া যায় না।  নীলদল হয়েছে ধূসর। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিকির নির্বাচনে নীলদলের নামে দলাদলীতে নতুন রাজনীদির জন্মদিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। তথা কথিত মাইনোরিটি গ্রুপ বনাম তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধার।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র বীরমুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহকারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কুটক্তি করার অভিযোগ উঠেছে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দুলন রায়ের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘একজন জুনিয়র শিক্ষক আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আমি মুক্তিযোদ্ধা কি না?  আমি নাকি মুক্তিযুদ্ধ না করে শুধু শুধু বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে থাকি। তিনি হয়তো আমাকে চেনেন না। তিনি শুধু আমাকে না তথা গোটা মুক্তিযোদ্ধার সম্মানকে হেয় করেছেন।

এসময় মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারা বলেন, আমার মাকে পাকিস্থানি রা বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিল।  আমি আর আমার বোন পাঁচ দিন না খেয়ে বনে বনে রাত কাটিয়ে পরবর্তিতে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি।  আমার বয়সের অনেকেই আজ নেই। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমি হয়তো আজও বেঁচে আছি। আমি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলদলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে বলেছি। কারণ আমি মনেকরি, নীলদল বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করা শিক্ষকদের সংগঠন। এখানে বিভাজন করে বিএনপি জামায়াতদের সুবিধা দেওয়ার পথ করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ’

এসময় জবি পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সিদ্দীকুর রহামন বলেন, ‘আমার বয়স তখন সাত কি আট বছর।  আমি তখন বাবা মায়ের কাছে শুনেছি, পটুয়াখালীতে আনু ও মনু দুই  বোন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে।’

তবে মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আনোয়ারাকে সরাসরি অপমান করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শিক্ষক দুলন রায়। তিনি বলেন, ‘ আমি কাউকে সরাসরি কিছু বলিনি। আমি বলেছি তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে।  তিনি মাইনোরিটিদের নিয়ে কথা বলেছেন তাই আমি বলেছি তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ’।

দুলনের ভেরিফাইট ফেসবুক এ দেওয়া স্ট্যাটাসটি ছিল, “মাইনরিটি নিয়ে যে সব তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধারা (!) নানা কুরুচিমুলক কথা বলেছেন তাদের বলছি সাবধান হয়ে যান। সময় আছে এখনো। মুক্তিযুদ্ধে হাতে কি ছিল বাঁশ না লাঠি ? কি নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন ?? ওই নাম বিক্রি করে অযোগ্য হয়েও সব সুবিধা নিয়েছেন !! আর কত !!”
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্বাচন আর রাজনীতি নিয়ে যেহেতু এমনটা হয়েছে এবং  জগন্নাথে একজনই মাত্র মুক্তিযোদ্ধা তাই বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের সন্তানসহ একই চেতনায় বিশ্বাসী সকলকে আঘাত করাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক নেতা।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে অধ্যাপক ড.আনোয়ারা ও তার বোন মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারা বেগম পটুয়াখালি জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। ওই সময় তারা দুই বোন ও বড় ভাই আবদুর রশিদ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার মাকে ধরে নিয়ে যায়।

এবিএন/মোস্তাকিম ফারুকী/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ