আজকের শিরোনাম :

প্রত্যাশা প্রাপ্তির ৪০ বছর

শুভ জন্মজয়ন্তী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৮, ২১:০৪

১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে সকালের আদ্র কুয়াশার চাদর মাড়িয়ে সূর্যটি উঁকি দেয়ার সাথেই জন্ম হয়েছিল এক বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলই নয়; স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জন্ম নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও এটি। বলছি কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং ঝিনাইদহ শহর হতে ২২ কিলোমিটার উত্তরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।

‘ধর্মতত্ত্ব, ইসলামী শিক্ষা, তুলনামূলক আইনশাস্ত্র এবং অন্যান্য শিক্ষণ শাখাসমূহে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষাচর্চা’র এক ব্যতিক্রমী লক্ষ্য নিয়ে শান্তিডাঙ্গা- দুলালপুরের এক গ্রামীণ জনপদে প্রতিষ্ঠা পায় এই বিদ্যাপীঠটি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার ৩৯টি বছর অতিক্রম করে ফেলেছে। দীর্ঘ এই পথযাত্রায় তুলতুলে শৈশব, দুরুন্ত কৈশোর পার করে উদ্দীপ্ত যৌবনে পা রাখতে গিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা চড়াই-উৎরাই। অমসৃণ পথ পাড়ি দিয়ে এখন সারা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। একাডেমিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ৪০ বছরে এসে উপনিত হয়ে একটি সয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হতে গিয়ে যেমন প্রাপ্তির পাল্লা দিন দিন ভারি হয়েছে; তেমনি অপ্রাপ্তির বেদনাও রয়েছে।

১৭৫ একরের নিজস্ব ক্যাম্পাসের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি নৈসর্গীক সৌন্দর্যে মোড়ানো। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তৈরী বনায়ন ও নির্মিত বিভিন্ন ভাস্কর্য-স্থাপত্য ক্যাম্পাটিকে অনন্য করে তুলেছে। ছবির মত করে সাজানো এই ক্যাম্পাসে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৩টি বিভাগ, স্কুল এন্ড কলেজসহ একটি ইনস্টিটিউট, শিক্ষার্থীদের ৮টি আবাসিক হল, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিকমানের মিলনায়তন, ৬টি একাডেমিক ভবন, সমৃদ্ধ লাইব্রেরী, চিকিৎসা কেন্দ্র, প্রকৌশল অফিস, জিমনেশিয়াম রয়েছে। এছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মরণে নির্মিত ‘মুক্ত বাংলা’ ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল, সততা ফোয়ারা ও দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস লেক।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম ক্লাস শুরু হয় ২৮ জুন ১৯৮৬ সালে। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২,৮১২জন (ছাত্র: ৮৬৪৭, ছাত্রী: ৪১৬৫; ৩১মে ২০১৭ পর্যন্ত)। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ৪১০ জন, কর্মকর্তা ৪২৫ জন, সহায়ক কর্মচারী ২০৯ এবং সাধারণ কর্মচারী ১৯০ জন। এম.ফিল কোর্সে  ২৮৫ জন এবং পি-এইচ.ডি প্রোগ্রামে ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে গবেষণাকর্মে নিযুক্ত রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬২১ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি এবং ৪২১ জনকে পি-এইচ.ডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।  অসার্স, মাস্ট্রার্স, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়াও আইআইইআর ইন্সিটিটিউটের মাধ্যমে বিএড ও এমএড কোর্সের ডিগ্রিও প্রদান করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়া সম্প্রতি একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে ফিরে এসেছে ব্যাপক গতিশীলতা। দীর্ঘকালের অভিশাপ সেশনজট সহনীয় অবস্থানে এসে পৌঁছেছে।

এত সব প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে বেজে উঠে অপ্রাপ্তির সুর। বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আইনুন নাহার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস মানেই একটা বাড়তি আনন্দ। এটি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। কিন্তু একটি আক্ষেপও আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দশক কাল হয়ে গেলেও এখনো আমরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার বিকাশ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের আশানুরূপ সুযোগ পাইনি। এছাড়া আবাসন নিয়েও সমস্যা প্রকট।’

৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে চলছে রং রং সাজ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে চলছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ভর্তি হতেই দুইটি ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ পার হয়ে গেল। আনন্দের সময়গুলো দ্রুত পার হয়। বিশ্ববিদ্যালয় আনন্দ দেয় আবার আবেগতাড়িতও করে। যেখানেই থাকি মন ফিরে আসবে বার বার মূলের টানে। শুভ জন্মদিন ভালবাসার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন। এই আনন্দের দিনে, আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যায়ের ৪০তম জন্মজয়ন্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।  শুভ জন্মজয়ন্তী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।’

এবিএন/অনি আতিকুর রহমান/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ