আমাকে একেবারে ধ্বংস করতে প্রতিশোধপরায়ণ এক ‘ক্ষমতাধর নারী’: সামিয়া
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২১, ১০:০৭
গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে পদাবনতি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া রহমান অভিযোগ করেছেন, তার সংবাদ সম্মেলনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ‘ক্ষমতাধর নারী’ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ওই নারী তাকে ধ্বংস করতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছেন।
মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
সামিয়া রহমান লিখেছেন, শুনলাম আমার এই প্রেস কনফারেন্সে চরম ক্ষুব্ধ, রাগান্বিত, এবং আমাকে একেবারে ধ্বংস করতে প্রতিশোধপরায়ণ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উচ্চপদস্থ ক্ষমতাধর নারী।
তিনি লিখেছেন, যেহেতু তার নামটিও (ওই নারী) চলে এসেছে আমার বক্তব্যে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে অথবা প্রেস কনফারেন্সে। তিনি এখন ভয়াবহ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে গতকাল সকল সাংবাদিকদের ডেকে ডেকে আমার বিরুদ্ধে নিউজ করার জন্য উসকাচ্ছেন। বলছেন যে কোনোভাবে সামিয়াকে ধ্বংস করে দিতে হবে। যে কোনো নিউজ দিয়ে, তা মিথ্যা হোক আর যাই হোক।
সামিয়া রহমান লিখেছেন, সাংবাদিকদের কাছেই শুনলাম যাদের যাদের তিনি (ওই নারী) ফোন দিয়েছিলেন। বললেন, মিথ্যা সত্যের ধার ধারিনা, যে কোনো মূল্যে সামিয়াকে শেষ করতে হবে। যে কোনো নিউজ করতে হবে সামিয়ার বিরুদ্ধে। প্রয়োজন হলে আমার সকল আর্টিকেলকে প্লেজারিজম বলে প্রমাণ করতে হবে। কারণ পদ ক্ষমতা তার হাতে, তিনি যদি বলেন তবে এগুলো জনগণ মেনে নেবে। সাংবাদিকরা বললে জনগণ মেনে নেবে। যে করেই হোক সামিয়াকে টিকতে দেয়া হবেনা। সামিয়ার এতো বড় সাহস আমাদের বিরুদ্ধে প্রেস কনফারেন্স করে! এবার আমি তাকে শেষ মারটা দেব।
ঢাবির এই শিক্ষক ফেসবুকে লিখেছেন, উনার (ওই নারী) এতো ক্ষোভ, এতো আক্রোশ কেন আমার বিরুদ্ধে? প্রথম থেকে উনি এবং উনার চামচারা কেন মিডিয়ার সামনে এতো সোচ্চার আমাকে নিয়ে? অ্যালেক্স মার্টিনের মিথ্যা চিঠির ষড়যন্ত্রের কি তিনিই তাহলে হোতা? প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে আমাকে শেষ মার দেবার চেষ্টা?
সামিয়া রহমান লিখেছেন, আমার ফেসবুক বন্ধুদের জানিয়ে রাখলাম, এই মহিলা আবার আমার বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছেন সাংবাদিকদের ফোন দিয়ে, ডেকে ডেকে। তবে আমি এখন প্রায় নিশ্চিত আমার বিরুদ্ধে শিকাগো জার্নালের মিথ্যা চিঠির, পুরো ষড়যন্ত্রের হোতা কে? তিনি ছাড়া আর কি কেউ হতে পারেন?
এরআগে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মলনে আসেন সামিয়া রহমান। গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে পদাবনতি দেওয়ার ঘটনাকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে তিনি বলেন, তাকে অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। বলির পাঁঠা হতে হয়েছে তাকে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: আ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শীর্ষক আট পৃষ্ঠার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিজস্ব জার্নাল সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউয়ে।
অভিযোগ ওঠে, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে পাঁচ পৃষ্ঠার মতো হুবহু নকল করেছেন তারা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানায় ওই গ্রন্থের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।
অভিযোগটি তদন্তে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করে সিন্ডিকেট। ২০১৯ সালে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে সামিয়া-মারজানের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটির সত্যতা পাওয়ার কথা জানানো হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ