আজকের শিরোনাম :

গুগল,ফেইসবুক,ইউটিউবে শিক্ষার্থীদের উন্নতি না অবনতি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২০, ১৭:১২

গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস হওয়ার পর কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ১৮/০৩/২০২০ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত পাঠ্যসূচী যথাযথভাবে কোথাও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচীর আলোকে মূল্যায়ন নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এবং জেলা শিক্ষা অফিসারগণ ষষ্ঠ থেকে নবম  শ্রেণীর সংক্ষিপ্ত ৩০ দিনের পাঠ্যসূচীর আলোকে মূল্যায়ন নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এ্যাসাইনমেন্ট গ্রেড (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত) অনুসরণ করে শিক্ষাথীর প্রতি সপ্তাহে ৩ টি করে এ্যানাইনমেন্ট (কাজ) দিতে হবে। এ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম প্রতিটি শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু এ্যাসাইনমেন্ট বিভিন্ন দোকানে (কম্পিউটার কাজ করে অথবা ফটোকপির মেশিন আছে) পাইকারি, খুচরা দামে বিক্রয় করা হচ্ছে। যা বিদ্যালয়ের আশে পাশে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ভিড়ে একজনের সাথে কথা বলার সুযোগ পেলাম। তোমার নাম কি? উত্তরে বলে আসিক, এখানে কি জন্য এত ভিড় সে  বলল এখানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর এ্যাসাইনমেন্ট তৈরী করে দিচ্ছে এবং তা আমরা বিদ্যালয়ে জমা দিয়ে দিব।

এতে অন্যের চেয়ে ভালো এ্যাসাইনমেন্ট পাওয়া যায়। এক বিষয় মাত্র ৩০ টাকা। আমি তাকে বললাম যে এ্যাসাইনমেন্ট লেখায় শিক্ষার্থীর মৌলিক চিন্তা, কল্পনা ও সৃজনশীলতা দেখবে। এর পর তোমাদেরকে তিনটি বিষয়ের জন্য ৭ দিন সময় দেয়া আছে। তোমাদের জ্ঞান বাড়বে নিজে নিজে বই থেকে লিখতে পারলে।

কেউ না পারার কারণে বা না বুঝার কারণে গুগল, ফেইসবুক, ইউটিউব থেকে সার্চ করে মিলে দেখা সব এ্যাসাইনমেন্ট পাওয়া যায়। ফলে সেখানে শিক্ষার মান উন্নত হতে পারে কি করে? ইউটিউবে অনেকে আবার চ্যানেল খুলে সুন্দরভাবে লেখা আছে শিক্ষার্থীরা শুধু ইউটিউব থেকে দেখে লিখে দেয়। যা দেখতে সুন্দর কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীর উপকারে আসবে না। ইউটিউবের মাধ্যমে সবার লেখা একই হবে তাহলে জ্ঞান, সৃজনশীলতা, চিন্তা উন্নতি হবে কি করে?

এর দায় নিতে হবে অভিভাবক এবং ইউটিউব চ্যানেলের মালিকদের। যারা ইউটিউব দিয়ে আয় করে তারা শিক্ষাকে ব্যবহার করে টাকা উপার্জনের চিন্তা আসলো কিভাবে? আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভালো লক্ষণ মনে হচ্ছে না। যা সহজ পাওয়া তা থেকে ভালো ফল আশা করা যায় না। কত সুন্দর শিক্ষা পরিকল্পনা ধুলিসাৎ করে দিলো এই ইউটিউব চ্যানেলগুলো (এ্যাসাইনমেন্ট তৈরীর ভিডিও বানিয়ে) আয় করার চিন্তা আসলো তাদের মাথায়। যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। ৩০ কর্মদিবসের সিলেবাস অতি কঠিন নয়। যার জন্য শিক্ষার্থীর জন্য অনেক যুগপোযোগী তার কথা বলে শেষ করা যাবে না।

তবে বিদ্যালয়ের সিলেবাস সাধারণত ১০ - ১৫ পৃষ্ঠা। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ - নবম শ্রেণীর পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠসূচী সম্ভাব্য কর্মদিবসে ৩০ দিনের  এই সিলেবাস। ষষ্ঠ শ্রেণীর সিলেবাস ৪৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। যা কোনো সচেতন বা শিক্ষিত লোক কম্পিউটারের সাহায্যে প্রিন্ট করে তার ব্যয় (২৫০ থেকে ৪৯০) টাকা হতে পারে। গ্রামে অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-মা ৩০ দিনের সলিবোস সম্পর্কে জানেন না।

৭ম শ্রেণী  সিলেবাস ৫৪ পৃষ্ঠা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ৩০ দিনের এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেখতে অনেক বড় মনে হবে পৃষ্ঠা নাম্বারের দিকে তাকালে। তাই এমন অসদুপায়ে এ্যাসাইনমেন্ট তৈরীতে শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবক জড়িত থাকতে পারেন বলে আমি বিশ^াস করি। না হলে দোকানে এত ভিড় থাকতো না। ইউটিউব চ্যানেল খোলার প্রয়োজন মনে করতে হত না।

শিক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম থাকার পরও এ্যাসাইনমেন্ট ভিডিও দেয়ার সাহস কি করে পায়? এই লোকগুলো যদিও তারা শিক্ষক বা শিক্ষিত লোক ছিল। সুতরাং এ্যাসাইনমেন্ট আসলে কি প্রয়োজন ছিল এই মহামারি করোনা ভাইরাস মাসে।
 ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এদেশের উপর হামলা চালায়। তখন স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় কিন্তু বন্ধ ছিল। তখন যুদ্ধ আর যুদ্ধ। ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ২ লাখ মা-বোনের নির্যাতনে শিকার হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে আসেন পাকিস্তান থেকে। স্বাধীন দেশে তখন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ১৯৭১ সালের ১ মার্চ যে শিক্ষার্থীরা যে ক্লাসে ছিল ১৯৭২ সালের শুরুতে সেই শিক্ষাবর্ষেই পড়বে।
এতে তেমন শিক্ষা খাতে প্রভাব পড়েনি। এখনো তেমন ক্ষতি হবে না (শিক্ষাখাতে) শিক্ষার্থীদের। তাই বলা হয় ,  
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।
কারণ শিখার কোন বয়স নাই,
শিক্ষা ছাড়া উপায় নাই।

আর ইউটিউব, ফেইসবুক, গুগল এ্যাসাইনমেন্ট যদি পাওয়া যায় পানির দামে শরবত (শিক্ষা/এ্যাসাইনমেন্ট) বিক্রয় ছাড়া আর কিছু না। আর দেশের কোটি শিক্ষার্থী এই এ্যাসইনমেন্টের কোনো উপকারে আসবে না। আমি মনে করি একটা দেশের চালিকাশক্তি অর্থনীতি। সাথে শিক্ষানীতি, রাজনীতি ইত্যাদি একটার সাথে আরেকটা জড়িত।

এ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নতি করতে গিয়ে তাদের আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যার জন্য দায় গুগল, ফেইসবুক, ইউটিউব।

 


এবিএন/ফাহাদ হোসেন/জসিম/জুয়েল

এই বিভাগের আরো সংবাদ