আজকের শিরোনাম :

দেশের জাতীয় উদ্যানগুলো অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সুপারিশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২০, ১৯:৩২

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বনজসম্পদ উন্নয়নের জন্য জনসমাগম ঠেকাতে দেশের জাতীয় উদ্যানগুলো বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। 

আজ রোববার কমিটির বৈঠকে এনিয়ে আলোচনা হয়।

করোনা মহামারি রোধে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব মানতে মানুষের বিচরণ না হওয়ায় জাতীয় উদ্যানগুলোর পরিবেশসহ প্রকৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখে এই সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশে একমত হয়ে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করার কথা জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বন অধিদপ্তর জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় জীববৈচিত্র্য থেকে শুরু করে পরিবেশে একটা ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করা গেছে। সেটা বন্যপ্রাণী, বন সবক্ষেত্রে। তো এই ধারাটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই।

সেজন্য আরও তিন মাস মানে অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় উদ্যানগুলো বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। জাতীয় উদ্যানগুলো থেকে টিকেট বিক্রি বা এসব থেকে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব পাই। এটা আয়। এবার ক্ষতির পরিমাণ কী, এটার একটা বিশ্লেষণ করা হবে।

বন অধিদেপ্তরের আওতায় দেশে বর্তমানে ১৯টি জাতীয় উদ্যান আছে।

সাবের বলেন, বর্তমানে আমরা ইকো-ট্যুরিজমের জন্য ১২ মাস সব উন্মুক্ত রাখি। কমিটি বলেছে, এমন হতে পারে প্রাণীদের প্রজনন সময়ে আমরা তিন মাস ইকোট্যুরিজম বন্ধ রাখলাম। সুন্দরবনের প্রাণীদের প্রজনন মৌসুমে সেখানে টুরিজম বন্ধ থাকতে পারে। বাকি সময় খোলা থাকবে। এরকম একটা নীতিমালার দিকে যেতে চাচ্ছি। মন্ত্রণালয় একমত হয়েছে।

বন প্রাণী নিধন ‘আমলযোগ্য’ অপরাধ করার সুপারিশ

প্রস্তাবিত বন আইনে সকল বন্যপ্রাণী হত্যার অপরাধকে ‘আমলযোগ্য’ ও ‘অজামিনযোগ্য’ করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

১৯২৭ সালের ‘দ্যা ফরেস্ট অ্যাক্ট’কে আরও যুগোপযোগী করতে ২০১৯ সালে সরকার নতুন আইন করার কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে আইনের খসড়া করা তা নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

বিদ্যমান আইনে বাঘ ও হাতি হত্যার অপরাধ ‘আমলযোগ্য’ ও ‘অজামিনযোগ্য’ হিসেবে রাখা আছে জানিয়ে সাবের বলেন, কমিটি মন্ত্রণালয়কে সকল বন্যপ্রাণী হত্যার অপরাধে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে।

তিনি বলেন, প্রকৃতি যেমন ফিরে আসছে এরমধ্যে ডলফিন মারা যাচ্ছে। ৫০টা শেয়াল পিটিয়ে মারা হলো- এসব ঘটনা ঘটেছে। বন আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সাবের আরও বলেন, বিদ্যমান আইনটি ব্রিটিশ আমলের। তারা সংরক্ষণের ধারেকাছে ছিল না। রাজস্ব আদায় মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। এখন বন ব্যবস্থাপনা, ব্যবহার, সুরক্ষা ও সংরক্ষণ এগুলো জানতে হবে। বনভূমি বলতে কী বোঝায়, বনের সংজ্ঞা, টেকসই ব্যবস্থাপনা এগুলো নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। সংজ্ঞাগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, বন হিসেবে রেকর্ড করা ভূমি যেগুলো বেদখলে আছে। সেগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। আইনি জটিলতায় অনেক জমি খাস খতিয়ানে চলে গেছে। সেই জমি কীভাবে উদ্ধার করতে পারি সেই আইনি প্রক্রিয়া বের করতে বলা হয়েছে।

সংসদের আগামী অধিবেশনে ‘ক্লিন এয়ার’ আইন আনা হবে বলেও জানান সাবের।

সাবের চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী দুই বছরের জন্য ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। ফোরামের দেশগুলো ২০৫০ সালে মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাবে। আমরা বাংলাদেশ এখনও এ বিষয়ে কথা শুরু করিনি। আমাদের আইনে ১০ ভাগ বলা আছে। সেখানে ৪ ভাগ মাত্র আসছে। ২০৫০ এর মধ্যে শতভাগে ভাগে যেতে চাই। কতটুকু পারবো, কারিগরি দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। এজন্য রোডম্যাপ করতে চাই। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটা স্টাডি করা হবে।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে উল্লেখ করা হয় দেশের জলজ জীববৈচিত্র্য বিশেষ করে ডলফিন সংরক্ষনের টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য রক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অন্যতম সফলতা হচ্ছে মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল এক হাজার পরিবারকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিকল্প আয় বৃদ্ধিমুলক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি পরিবারকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ডলফিনের গবেষণা ঘাটতি বিশ্লেষন এবং আবাসস্থল সংরক্ষণ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সকল তথ্যাবলী সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, দীপংকর তালুকদার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, মো. রেজাউল করিম বাবলু এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশ নেন।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ