আজকের শিরোনাম :

মেট্রোরেলের বগির প্রথম চালান ঢাকায় পৌঁছেছে

  জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২১ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৪২ | আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২১, ১৯:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগেই মেট্রোরেলের বগির প্রথম চালান ঢাকায় পৌঁছেছে।  আজ বুধবার (২১ এপ্রিল) বিকেল সোয়া চারটার দিকে বগিগুলো উত্তরার দিয়াবাড়ির জেটিতে পৌঁছাবে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

প্রথম চালানে মেট্রোরেলের বগি আছে ছয়টি। ২৩ এপ্রিল বগিগুলো এসে পৌঁছানোর কথা ছিল। গত ৪ মার্চ জাপানের কোবে বন্দর থেকে এমভি এসপিএম ব্যাংকক নামের একটি জাহাজযোগে এসব বগি পরিবহন শুরু হয়। 

গত ২৪ মার্চ পায়রা বন্দরে বগিগুলো পৌঁছে। ছয়টি বগি নিয়ে পায়রা বন্দর থেকে জাহাজটি গত ৩০ মার্চ মোংলা বন্দরে পৌঁছে। ৩১ মার্চ এগুলো জাহাজ থেকে খালাস করা হয়। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়াশেষে নদীপথে বগিগুলোর পরিবহন শুরু হয়। গত সোমবার ( ১৯ এপ্রিল) চাঁদপুর এসে পৌঁছায় বগিগুলো। সেখান থেকে নৌপথে আজ ঢাকা এলো। 

সড়ক ও সেতু বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ বলেন, ‘আগামীকাল বৃহস্পতিবার সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।’ 

মেট্রোরেলের কোচ আনার জন্য উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিশেষ জেটি তৈরি করেছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)।

৪ মার্চ বাংলাদেশ সময় বিকেল তিনটায় জাপানের কোবে বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে কোচগুলো। ৩১ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটায় মোংলা বন্দরে পৌঁছে। ওই দিন ও তার পরের দিন পহেলা এপ্রিল কোচগুলো সেখানে খালাস করা হয়।

মোংলা থেকে বার্জে করে মেট্রোরেলের দুটি কোচে সেট ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।

কোচগুলো জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম কোম্পানি লিমিটেড তৈরি করছে। বাংলাদেশে এই কোচ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ঢাকার উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেলপথ স্থাপনের কাজ সবমিলে এগিয়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিনে ও রাতে প্রকল্প এলাকায় কাজ চলছে। বিশেষ করে মিরপুর, আগারগাঁও অংশে কাজ অব্যাহত রাখতে রাস্তার বিভিন্ন অংশ বন্ধ রাখা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ২৪ সেট ট্রেন তৈরি করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি। প্রতি সেট ট্রেনের দুপাশে দুটি ইঞ্জিন থাকবে। এর মধ্যে থাকবে চারটি করে কোচ। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোতে থাকবে লম্বালম্বি আসন। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দুটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুপাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানি স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তাব্যবস্থা সংবলিত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে এক হাজার ৭৩৮ জন।

সার্বিক কাজের অগ্রগতি
মেট্রোরেলের পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে। সে অনুযায়ী শ্রমিকরা দিনরাত শ্রম দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন মেট্রোরেলের কাজ।

ডিএমটিসিএল-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, রাজধানীর প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের (এমআরটি লাইন-৬) নির্মাণকাজের অগ্রগতি এসেছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ভাগ উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

ডিএমটিসিএল সূত্র আরও জানিয়েছে, ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৩ দশমিক ২৭৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এখন দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে ডিপোর ভিতরে ১৬ দশমিক ৯০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া ভায়াডাক্টের উপরে ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক প্লেট কাস্টিং সম্পন্ন হয়েছে। রোড কাম রেল ভেহিক্যাল ব্যবহার করে ডিপোর অভ্যন্তরে এবং ভায়াডাক্টের উপরে ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ডিপোর ভিতরে ৬ কিলোমিটার ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপন হয়ে গেছে।

ডিএমটিসিএল-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন মতে, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্লাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ। উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্লাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন কাজ চলমান। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণকাজও চলমান। এ ছাড়া উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই বিবেচনায় পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালান্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটির কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

ঢাকার যানজট নিরসনসহ নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে এই মেট্রোরেল প্রকল্পের মাধ্যমে সব কটি পয়েন্টে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার বা কামরা। এই ট্রেনের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় এক শ কিলোমিটার। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। চলাচল শুরু হলে উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ