আজকের শিরোনাম :

রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন মজুমদার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৮, ১৮:৫০ | আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৮, ১৯:৩৮

নেত্রকোনা, ২৮ জুলাই, এবিনিউজ : বাঙালির চিন্তা চেতনা ,সাহিত্য,সংস্কৃতির তপোবনে কবিগুরু স্বয়ং ব্যাসদেব। কবিগুরু স্বীয় প্রজ্ঞায় বাঙালির সংস্কৃতিকে চিরজৌবনা করে গেছেন। কবিগুরুর সংস্কৃতির মহাকাব্যর সংগীত ভুবনের সহচর নেত্রকোনার হাওরের সন্তান শৈলজারঞ্জন মজুমদার যাকে কবিগুরু “আমার গানের টাইপ মাস্টার” বলতেন যিনি তিনশত রবীন্দ্রসংগীতের স্বরলিপিকার।

আচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদার ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৪ঠা শ্রাবন (২০ জুলাই ১৯০০ সাল) অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার বাহাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৭ সালে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯২০ সালে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে আই এস সি এবং ১৯২২ সালে স্কটিশ র্চাচ কলেজ থেকে বিএস সি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২৪ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে এম এস সি পরীক্ষায় দ্বিত্বীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে সর্বোচ্চ স্থানলাভ করেন। পিতার ইচ্ছানুসারে ১৯২৭ সালে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

কিছুদিন আশুতোষ কলেজে অধ্যাপনা ও গবেষণা করেন। ছেলেবেলায় ঠাকুমার কাছে ধর্মীয় গান শুনতেন। সেহেতু গান ও সুরের প্রতি টান জন্মায়। বাড়িতে কবিগুরুর লেখা পড়ার ফলে গুরুর প্রতি টান চলে আসে এবং সেই থেকে রবীন্দ্রসংগীত উপর ভালোবাসা জন্মায়।

১৯৩২ সালে শান্তিনিকেতনের বাইরে প্রথম নেত্রকোনায় কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী পালন করেন। কবির আমন্ত্রন পেয়ে সংগীত ও সুরের রসায়নে ১৯৩২ সালে বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন। গানের অমোঘ টানে কবি ও তার সংগীত শৈলজারঞ্জনের “জীবনের ধ্রুবতারা” হয়ে ওঠেন। ১৯৩৫ সালে কবির ইচ্ছায় শান্তিনিকেতনে ছোটদের গানের পাঠ দেওয়া শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে সংগীতের অধ্যক্ষ হন।

নেত্রকোনা জেলায় আচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের বাল্য স্কুল দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে জন্মবার্ষিকীতে রবি কিরণে শৈলজারঞ্জন আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে দেশি বিদেশি গুণিজনের মনোমুগ্ধকর আলোচনা কবিগুরুর সহচর আচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে জীবন্ত করে তোলেন।

নেত্রকোনা তথা হাওরের কবি নির্মলেন্দু গুন ও কবিগুরুর জীবন নিয়ে গবেষণারত রাজনীতির পুরোধা সুভাষ সিংহ রায় কবিগুরু ও শৈলরাঞ্জন মজুমদার এর স্মৃতি ফেরালেন।

কবিগুরুর জীবন নিয়ে সুভাষ সিংহ রায় বলেন, আমরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শুধু ঘরের মধ্যে শোভাবর্ধক হিসেবে রেখেছি। কিন্তু কবিগুরুর চিন্তা, চেতনা, আদর্শ  ধারণ করতে পারিনি।

আচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদার সম্পর্কে স্মৃতি চারণ করে তিনি বলেন, একদিন ইতিহাস ক্লাসে আকবর সম্পর্কে পড়া মুখস্থ বললাম। সহপাঠীরা হেসে উঠলো, বোর্ডিংয়ে ফিরে বই খুলে দেখলাম ঠিকই তো বলেছি। দুই চার দিন পর আবার পড়া বলছি। সহপাঠিরা হেসে উঠলো তখন একটু রাগ করে মাস্টার মশাইকে বললাম আমি তো পড়া ভুল বলিনি। মাস্টার মশাই কাছে ডেকে বললো, তুমি সবথেকে ভালো বলেছো। কিন্তু তোমার ভাষাটা বাঙাল। এই যে বাঙাল বাঙাল বলে ক্ষেপাতো, ছড়া কাটতো এটা তুলে ধরেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলার যে ঐতিহ্য, বাংলার যে অহংকার সমুন্নত রাখার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন এই বিতর্কে তিনি বলেন, যে গবেষণা করে দেখা গেছে, যখন কোলকাতায় সভা হয় তখন কবিগুরু শিলাইদহে অবস্থান করছিলেন। সেহেতু এই অভিযোগ ভিত্তিহীন, সেইসাথে ঢাকার নবাবরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রথম সংবর্ধনা দেন। সেহেতু অভিভাবকদের ছেলে-মেয়েদেরকে সঠিক ইতিহাস জানানো উচিত। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিপ্লবের আহব্বান জানান।

কবি নির্মলেন্দু গুন বলেন, নতুন প্রজন্মকে সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা উচিত। রবীন্দ্রনাথ ও শৈলজারঞ্জনকে নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে সাহিত্যর নবধারা উন্মোচিত হবে। জাতিকে সংস্কৃতি চর্চায় মনোনিবেশ করার আহব্বান জানান তিনি।

আলোচনা শেষে শৈলজারঞ্জন মজুমদার এর উপর স্থিরচিত্র দেখানো হয়। অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার দত্ত, ড.সুধীর কুমার ঘোষ, ড.সুমিত কুমার বসু, ড.সুরজিত রায়, নিবেদিতা নাগ তহবিলদার, জেলা প্রসাসক মঈনউল ইসলাম, এ্যাড. অসিত সরকার কাজল, এস বি বিপ্লব, মত্উির রহমানসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।

এবিএন/অনিক/জসিম/শংকর রায়

এই বিভাগের আরো সংবাদ