সমরেশ মজুমদারের ৩০ বিখ্যাত উক্তি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:১৯
সমরেশ মজুমদার হলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক। ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ (বাংলা ২৬ ফাল্গুন, ১৩৪৮) সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে। তিনি বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো।
তাঁর প্রথম গল্প “অন্যমাত্রা” লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। ১৯৬৭ সালে দেশ পত্রিকায় অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো। ১৯৭৬ সালে দেশ পত্রিকায় তাঁর প্রথম উপন্যাস “দৌড়” ছাপা হয়েছিলো। তিনি শুধু তার লেখনী গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনীতে তার জুড়ি মেলা ভার।
সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ ‘ বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে। অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড। সমরেশ মজুমদার কলকাতা ও বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসাবে পাঠকমন জয় করেছেন।
সমরেশ মজুমদারের অসংখ্য মহামূল্যবান বাণীর থেকে বাছাইকৃত অনুপ্রেরণামূলক ৩০ টি উক্তি এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:
১. নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মেয়েগুলো তাদের সব রকম কনজারভেটিভ ধারনা বুকে পুষে রেখে এমন ভাবভঙ্গী করে যেন পৃথিবীর সব ছেলেই তাদের দিকে হামলে পড়ছে।
২. মেয়েরা গণেশের মত, মা দূর্গার চারপাশে পাক দিয়ে যে জগত দেখে তাতেই তৃপ্তি আর পুরুষরা কার্তিকের মত সারা পৃথিবী ঘুরে আসে অথচ কি দেখে তা তারাই জানে না।
৩. মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে তাকে ঘৃনা করলেও ভুলে যেতে পারে না। পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে দেখবেন শুকিয়ে যাওয়ার পড়েও দাগ রেখে যায়।
৪. একটি একা মেয়ে ইচ্ছে করলেই বাজার যেতে পারে, ডাক্তার এর সঙ্গে দেখা করে ওষুধ আনতে পারে। কিন্তু এসব করণীয় কাজ কেউ আন্তরিকতার সাথে করে দিলে একধরনের আরাম হয় । মনের আরাম।
৫. পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ত্যাগ করতে না চাইলে পাওয়ার আশা অর্থহীন। সুদিপ বলেছিল, বাঙ্গালী মল মুত্র এবং বীর্য ছাড়া কিছুই ত্যাগ করতে জানে না।
৬. নিজের বোকামি বুঝতে পারার পর কারো দুঃখ হয়, কারো হাসি পায়।
৭. পৃথিবীর নিয়ম বড় অদ্ভুদ, যাকে তুমি সবচেয়ে বেশী ভালোবাসো সেই তোমার দু:খের কারণ হবে।
৮. ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানেনা। মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে যে কখন অভিনয় শুরু করে তারা তা নিজেও জানেনা।
৯. ছাইটা হলো স্মৃতি, আগুনটা হলো বর্তমান।
১০. মৃত্যু কি সহজ, কি নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়।
১১. তুমি যদি জিততে চাও তাহলে তোমাকে নির্মম হতে হবে। অভিযানে বেরিয়ে দলের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিযান বাতিল হয়না, অসুস্থকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেই উপায় না থাকলে তাকে ফেলে রেখেই এগোতে হবে। এক্ষেত্রে দয়ামায়া ইত্যাদি ব্যাপারগুলো খবই প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। কোনও কোনও মানুষ জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষে এগিয়ে যাওয়ার সময় এমনই কঠোর হন। তাদের নিষ্ঠুর বলা হয়। ইতিহাস ওইসব মানুষের জন্য শেষ পর্যন্ত জাযগা রাখে।
১২. স্বাধীনতার জন্য যোগ্য হতে হবে তারপর বাইরের স্বাধীনতা আদায় করতে হবে।
১৩. শাসন শুনতে যতই খারাপ লাগুক, যে মানুষের জীবনে শাসন মানুষ থাকে না তার মত অভাগা আর কে আছে।
১৪. বিজ্ঞজনেরা বলে কখনও কাউকে ভালোবাসলে তাকে বিয়ে করো না । ভালোবাসা হল বেনারসী শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়, তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।
১৫. বিষয় সম্পত্তি মানুষকে নির্লজ্জ করে । বিশেষ করে আর্থিক দুরবস্থায় পড়লে এবং সামনে কোন নির্দিষ্ট উপায় না থাকলে সে অসহায় হয়ে পড়ে । তরুণ বয়সে যা সহনীয় হয় যৌবন পেরিয়ে তা হয়ে দাঁড়ায় পীড়াদায়ক। তখন ডুবন্ত মানুষের পায়ের মতো মানুষের মন কিলবিল করতে থাকে একটু শক্ত জমির জন্য। ন্যায়, নীতি, স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদির ওপর নিজেকে স্তোক দেয়া পোশাক পড়িয়ে দিতে সে মোটেই দেরি করে না।
১৬. ভালোবাসা কখনো কৃতজ্ঞতা থেকে জন্মায় । কৃতজ্ঞতা মানুষকে নম্র করে হয়তো সেই নম্রতা সইতে শেখায় । সয়ে গেলে একসময় ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়।
১৭. মুখের উপর মনের কথা স্পষ্ট উচ্চারণ না করলে দুঃখগুলো দূরে থাকে।
১৮. প্রেমের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত বোধহয় তার শেকড় মনের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে না।
১৯. মানুষ যখন কোন কিছুকে মরীয়া হয়ে আঁকড়ে ধরে তখন তার ওপর প্রচণ্ড নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । কিন্তু কোন কারণে অকৃতকার্য হলে সে দিশেহারা হয়ে যায় তা থেকে নতুন করে উঠে দাঁড়ানো অসম্ভব।
২০. যে নিজের চোখের জল ফেলে না অথচ ভেতরে ভেতরে রক্তাক্ত হয় তার কষ্ট সবাই বুঝতে পারেনা।
২১. মানুষের পায়ের তলায় শেকড় আছে । পুরনো জায়গা থেকে শেকড় তুলে নিতে তার যেমন বেশি সময় লাগে না তেমনি নতুন জায়গায় সেই শেকড় বসে যেতেও দেরি হয় না।
২২. মরে যাওয়া মানুষ জীবিতদের মনে যে প্রতিক্রিয়া রেখে যায় তার দায় বইতে হয় অনেকদিন কারো কারো ক্ষেত্রে সারাজীবন।
২৩. পৃথিবীর অর্ধেক কাজ যুক্তি দিয়ে হয় না।
২৪. মেয়েরা হল জমির মত । তাদের চারপাশে নদীর স্রোত । ভালো বাঁধ না দিলে সেই জমি নদী গ্রাস করে নেবেই । আর বাঁধ ভেঙে মেয়েদের পক্ষে নদীর সঙ্গে লড়াই করা কতটা সম্ভব তা সময় বিচার করবে।
২৫. কোন মানুষের যদি জেদ, পরিশ্রম, সততা এবং সেই সঙ্গে প্রতিভা থাকে জীবন তাকে সাফল্য দেবেই।
২৬. সব কিছু মনের মত মেলে না, মানিয়ে নিতে হয় । মেনে নিলে একসময় ঠিক সুখ ফিরে আসে।
২৭. প্রতিটি সংসারের নিজস্ব কিছু সমস্যা থাকে । বাইরে থেকে দেখলে আঁচ করা যায় না।
২৮. বিয়ের পর প্রথম কিছুটা দিন যে কোন নতুন বউ নতুনই থাকে । তখন তার সঙ্গে একটু দূরত্ব রেখে কথা বলা, তিক্ততা এড়িয়ে চলা হয় । কিন্তু কয়েকটা দিন কাটলেই কখন সবার অজান্তে সে নিজের হয়ে যায় একসঙ্গে না থাকলেও।
২৯. বিজ্ঞজনেরা বলে জীবনযাপন বড় সহজ ব্যাপার যদি মানিয়ে চলতে পার । হংসের মত দুধটুকু খেয়ে জল ফেলে দাও, গায়ে মেখো না । কিংবা দুটোকে মিলিয়ে মিশিয়ে জটিল করতে যেও না । সংসারে থাকবে সন্ন্যাসীর মত । স্পর্শ করবে কিন্তু ধরবে না । এই আলগাভাব যে যত ভাল রাখতে পারবে তার তত ঝামেলা কম।
৩০. আকাঙ্ক্ষার জিনিস পাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে শিশুরা যেমন হেলায় ফেলে রাখে ঠিক তেমনি করে ভালবাসা ফেলে রাখতে নেই । কারণ ভালবাসা প্রতিমুহূর্তে প্রতিপালিত হতে চায় তাকে আগলে রাখতে হয়।
সমরেশ মজুমদারের গ্রন্থ তালিকা:
- সত্যমেব জয়তে
- আকাশ না পাতাল
- তেরো পার্বন
- সওয়ার
- টাকাপয়সা
- তীর্থযাত্রী
- ভালোবাসা থেকে যায়
- নিকট কথা
- ডানায় রোদের গন্ধ
- জলছবির সিংহ
- মেয়েরা যেমন হয়
- একশো পঞ্চাশ (গল্প সংকলন)
- উত্তরাধিকার
- কালবেলা
- কালপুরুষ
- গর্ভধারিনী
- হৃদয় আছে যার
- সর্বনাশের নেশায়
- ছায়া পূর্বগামিনী
- এখনও সময় আছে
- স্বনামধন্য
- কলিকাল
- স্বপ্নের বাজার
- কলকাতা
- অনুরাগ
- তিনসঙ্গী
- ভিক্টোরিয়ার বাগান
- সহজপুর কতদূর
- অনি
- সিনেমাওয়ালা
- সূর্য ঢলে গেলে
- আশ্চর্যকথা হয়ে গেছে
- অগ্নিরথ
- অনেকই একা
- আট কুঠুরি নয় দরজা
- আত্মীয়স্বজন
- আবাস
- আমাকে চাই
- উজান গঙ্গা
- কষ্ট কষ্ট সুখ
- কুলকুন্ডলিনী
- কেউ কেউ একা
- জনযাজক
- জলের নিচে প্রথম প্রেম
- জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ
- দায়বন্ধন
- দিন যায় রাত যায়
- দৌড়
- বড় পাপ হে (গল্প)
- বিনিসুতোয়
- মনের মতো মন
- মেঘ ছিল বৃষ্টিও
- শরণাগত
- শ্রদ্ধাঞ্জলি
- সাতকাহন
- সুধারানী ও নবীন সন্ন্যাসী
- হরিনবাড়ি
- কইতে কথা বাধে
- মধ্যরাতের রাখাল
- আকাশে হেলান দিয়ে
- কালোচিতার ফটোগ্রাফ
- আকাশকুসুম
- স্বরভঙ্গ
- ঐশ্বর্য
- আকাশের আড়ালে আকাশ
- কালাপাহাড়
- অহংকার
- শয়তানের চোখ
- হৃদয়বতী
- সন্ধেবেলার মানুষ
- বুনোহাঁসের পালক
- জালবন্দী
- মোহিনী
- সিংহবাহিনী
- বন্দীনিবাস
- শেষের খুব কাছে
- জীবন যৌবন
- আহরণ
- বাসভূমি
- এত রক্ত কেন
- এই আমি রেণু
- উনিশ বিশ
- মৌষলকাল
- আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮২
- সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ১৯৮৪
এই বিভাগের আরো সংবাদ