জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আয়োজন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০১৮, ২০:০৮

ঢাকা, ১২ আগস্ট, এবিনিউজ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি চারদিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। 

কর্মসূচির প্রথম দিন আজ রবিবার (১২ আগস্ট) বিকেল ৫:০০টায় বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গ্রন্থ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। (প্রদর্শনী চলবে ১২ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত)। প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম বিষয়ে দেশ-বিদেশের লেখকদের চারশতাধিক বই ও সংকলন স্থান পায়। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। 

বিকেল ৫:১৫টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় বাঙালির বঙ্গবন্ধু শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। একক বক্তৃতা প্রদান করেন কবি কামাল চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু রচিত কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থ থেকে পাঠ করেন এস. এম. মহসীন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। 

স্বাগত ভাষণে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য ও সমার্থক শব্দ-প্রায়। তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন ভূখ- এবং লাল-সবুজের পতাকা অর্জন করেছি। আজও তাঁরই প্রেরণায় আমরা এগিয়ে চলেছি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে। 

বাঙালির বঙ্গবন্ধু শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করে কবি কামাল চৌধুরী বলেন, ভাষা আন্দোলনের কূলপল্লী স্রোত বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয় এবং এই পর্বে মূল নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ একত্র হয়ে এক অখ- বাঙালি জাতিতে পরিণত হয়েছিল। এভাবেই সংগ্রাম ও আন্দোলনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে একটি সংগ্রামমুখি সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছিলেন। 

বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসের প্রথম বাঙালি যাঁর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্য, বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অবয়বে। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আগে অনেকেই দেখেছেন কিন্তু বাস্তবায়ন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে। বিশ্বব্যবস্থার বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের অভিবাসনের ইতিহাস আমরা জানি। একই ভাষাভাষীর মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে। বাঙালিরও একটি বৃহৎ অংশ এখন ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও অনেক বাঙালির বসবাস। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধু এ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলেই তিনি বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের জনক। 

একক বক্তা বলেন, সংগ্রাম ও আন্দোলনের সুদীর্ঘ যাত্রায় বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে আপন করে নিয়েছিল তাদের একজন হিসেবে, বাঙালির ইতিহাসের প্রধান নায়ক হিসেবে। বাঙালির জাগরণের চূড়ান্তপর্বে জাতি ও তাঁর নাম সমার্থক হয়ে উঠেছিল। আজও বাঙালি এবং তাঁর পরিচয় সমার্থক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ আমাদের প্রাত্যহিকতায় মিশে আছেন- মিশে থাকবেন জাতির অগ্রযাত্রার প্রতিটি অনুভবে সাহস, শক্তি ও অনুপ্রেরণা হিসেবে। 

সভাপতির বক্তব্যে একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি এবং জয়লাভ করেছি। যত চেষ্টাই হোক না কেন বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও বাংলাদেশ একাকার হয়ে গেছে। জীবদ্দশায় তিনি যেমন আমাদের সংগ্রাম ও সংকল্পে প্রতীক ছিলেন, মৃত্যুর এত বছর পরও তিনি তাঁর সেই স্থানেই স্বমহিমায় বিরাজিত রয়েছেন।  অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সায়েরা হাবীব। 

আগামীকালের অনুষ্ঠান 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি চারদিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। 
কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আগামীকাল সোমবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১১:০০টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক শিশু-কিশোর বক্তৃতানুষ্ঠান। এতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, লেখক সুভাষ সিংহ রায়। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরী।  

বিকেল ৪:৩০টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারে তিনটি পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন মোল্যা, কাবেদুল ইসলাম এবং মুহাম্মদ শামসুল হক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এম.পি। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। 

এবিএন/রাজ্জাক/জসিম/এআর

এই বিভাগের আরো সংবাদ