
চট্টগ্রাম, ২১ এপ্রিল, এবিনিউজ : চট্টগ্রামে ৬ ঘন্টার বৃষ্টিতে ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নগরীর কয়েক লাখ মানুষ। ডুবে গেছে সড়ক বাসা-বাড়ির নিচতলা, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নগরীর অধিকাংশ এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এ কারণে আজ শুক্রবার সকাল থেকে পথচারীরা চরম দুর্ভোগ পোহাতে পড়েন।
বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানি। নগরীর কোথাও কোথাও হাঁটুপানি থেকে কোমর সমান পানি দেখা গেছে। আজ শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগে ৬টা নাগাদ শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টি। সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ঝরে। এরপর বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে ঝরছে বৃষ্টি। কালবৈশাখীর প্রভাবে এ বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ জানান, ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু নদীবন্দরে কোন সংকেত ছিল না। কালবৈশাখীর প্রভাবে চট্টগ্রামজুড়ে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভোর থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এ বৃষ্টিপাতে নগরীর এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে গেছে।
নগরীর নিচু অঞ্চল বিশেষ করে ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, চকবাজার, বাকলিয়া, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের উত্তর পাশের সড়ক, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, কমার্স কলেজ রোড, হোটেল আগ্রাবাদের সামনেসহ বিস্তীর্ণ এলাকা হাঁটু পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকার রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে যান চলাচল করতে পারছে না।
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, নগরীর মুরাদপুর থেকে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খাল বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হওয়ায় পানি নামতে পারছে না। তাই খালের আশপাশের সব নিচু এলাকায় পানি জমে থই-থই করছে। সড়ক বাসা-বাড়ির নিচতলা, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে নানা দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
একই অবস্থা হয়েছে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকার। এ এলাকার চশমা খালের সংস্কার না হওয়ায় পানি জমে জলজট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টিতে নগরীর কাপাসগোলা, বাদুঁরতলা, রাহাত্তারপুল, কালামিয়া বাজার, মোহরা, হালিশহর, পতেঙ্গা, বন্দর, আগ্রাবাদ, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, চকবাজার, নাসিরাবাদসহ সবকটি এলাকায় পানি থই-থই করছে এখন। বৃষ্টির সাথে ক্রমেই বাড়ছে পানির উচ্চতা।
বিশেষ করে নগরীর প্রধান সড়কের মধ্যে কালুরঘাট পতেঙ্গা সড়কের বাসসিগনেল, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ এলাকায় ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। একইভাবে বাঁদুরতলা, কাপাসগোলা সড়ক, বহদ্দারহাট-শাহ আমানত সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক ডুবে গিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সড়কে কর্মজীবি শ্রমিক তেমন দেখা না গেলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর অসুবিধা হওয়ায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এমন বৃষ্টিতে দু বছর আগেও নগরীর দুই তৃতীয়াংশ খোঁজে পাওয়া যেত না। পানিতে তলিয়ে যেত। গত দেড় বছরের প্রচেষ্টায় তা কমে এক তৃতীয়াংশে নেমেছে। যেসব এলাকা এখন ডুবেছে সেখানেও জলবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি খুব কম সময়ে ওসব এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনও আমরা করতে পারব।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, জলবদ্ধতা প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ এলাকায় নালা-খাল সংস্কার, সড়ক উচুকরণসহ প্রয়োজনীয় কাজ করা হয়েছে। এসব এলাকা এখন ডুবেনি। আশা করি সামনের বছর জলজট থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি